সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ ভেঙে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন চলছে।
সূত্র মতে, নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি অংশ। সদ্য বহিষ্কৃত দলটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলের নেতৃত্বে ওই অংশটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল গণমাধ্যমকে বলেন, মাহী বি. চৌধুরীর একক সিদ্ধান্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেয়া একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। তবে বাবার নাম ব্যবহার করে মাহী বি. চৌধুরীর সিদ্ধান্তে দলের অধিকাংশ নেতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দু-একদিনের মধ্যেই তলবি সভা ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব।
তিনি বলেন, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় কমিটি ৭১ সদস্যের হলেও এখন রয়েছে ২৫ থেকে ২৬ জন। এর মধ্যে কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবলু, যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জোবায়ের, প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী জুন্নু, কৃষক ধারার আহ্বায়ক চাষী এনামুল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিপরা রহিম, সদস্য নুর মুহাম্মদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মতিনসহ ১৭ জনই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।
দল ভাঙনের বিষয়ে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, এক মাস আগে যার পদ স্থগিত করা হয়েছে, সে কোথায় যাবে না যাবে তা ভাববার সময় আমাদের নেই। আর তাদের ড. কামাল হোসেন নেবেন কি-না সেটা তো একটি প্রশ্ন। বিকল্পধারার নেতারা ঐক্যবদ্ধ আছেন। দলে কোনো ভাঙন হচ্ছে না। দলে একক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
প্রসঙ্গত, বিশিষ্ট আইনজীবী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিকল্পধারাকে বাইরে রেখে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়ে নয়া এ জোট গঠিত হয়। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত রয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে দুটি শর্ত দিয়েছে বিকল্পধারা। প্রথমটি হচ্ছে- প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তির সঙ্গ ত্যাগ। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে ক্ষমতার ভারসাম্য।
সরকারের বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় যুক্তফ্রন্ট। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিকল্পধারা যোগ দেয়নি। এ নিয়ে বিকল্পধারার নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ এখন চরমে। ইতিমধ্যে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে।
বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজমুল হক পিন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, কিছুদিন আগে দল থেকেই গুঞ্জন শুনছিলাম বিকল্পধারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার পক্ষে। কারণ দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। স্বৈরাচার আছে এবং দুঃশাসন আছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই জাতীয় ঐক্যের প্রতিষ্ঠা।
দলের সাংগঠনিক অবস্থার বিষয়ে আরেক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিকল্পধারার কয়েকটি সভায় ১৫০ আসন চাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এমনও বলা হয়েছিল- দলের সাংগঠনিক শক্তি তো নেই। এমন কথা বলে হাসির পাত্র হওয়া ঠিক হচ্ছে না। ওই নেতা আরও বলেন, বিকল্পধারার সাংগঠনিক অবস্থা এমনই দুর্বল যে দলের চেয়ারম্যান বি. চৌধুরীর নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জেও কোনো কমিটি নেই। এমনকি মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরেও কমিটি নেই।
এদিকে বিকল্পধারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেয়ায় মতবিরোধ দেখা দিয়েছে যুক্তফ্রন্টে থাকা বাকি দলগুলোর মাঝে। বিকল্পধারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য- এই তিন দল নিয়ে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট হয়। পরে ৮ অক্টোবর এ ফ্রন্টে যোগ দেয় সোনার বাংলা পার্টি ও জনদল নামের আরও দুটি দল। বিকল্পধারা বাদে যুক্তফ্রন্টে থাকা বাকি সব দলই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছে। শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিকল্পধারার সঙ্গে যুক্তফ্রন্টে থাকা কোনো দলের নেতা আর যোগাযোগ করেননি বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর জানান, স্যার মিটিংয়ে আছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর মাহী বি. চৌধুরীর সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার কথোপকথনের অডিও ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে আরও ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তফ্রন্টে থাকা দলগুলোর।