টাইব্রেকারে অবিস্মরণীয় জয়ে কোয়ার্টারফাইনালে রাশিয়া

টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টারফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়া। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও ১-১ সমতা থাকা ম্যাচে পেনাল্টি শুটে জয় তুলে নিয়ে ২১তম ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনালে উঠলো স্বাগতিকরা। আজ টুর্নামেন্টের শেষ ষোলোর তৃতীয় ম্যাচে পেনাল্টি শুটে রাশিয়া ৪-৩ গোলে হারায় স্পেনকে। এই জয়ে ফ্রান্স, উরুগুয়ের পর তৃতীয় দল হিসেবে চলতি বিশ্বকাপের শেষ আটে উঠলো রাশিয়া।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে উঠে স্পেন। তবে গ্রুপ রানার্স-আপের স্বাদ নিয়ে শেষ ষোলোর টিকিট পায় রাশিয়া। তবে এসব সমীকরণে কোন দলই এগিয়ে নেই। কারণ স্বাগতিক হওয়ার সুবিধায় এগিয়ে ছিল রাশিয়াই। ৩-৪-২-১ ফরমেশন নিয়ে খেলতে নেমে ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে প্রথম আক্রমণ চেষ্টা করে রাশিয়াই। কিন্তু সেটি থেকে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি স্বাগতিকরা।
তবে ১২ মিনিটে রাশিয়ার বদন্যতায় সাফল্য পায় স্পেন। ফ্রি কিক নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্জিও রামোসকে নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রাশিয়ার সার্জি ইগনাশেভিচ। বল ইগনাশেভিচের পায়ে লেগে রাশিয়ার জালে জড়ায়। তার আত্মঘাতি গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্পেন।
লিড নিয়েও বল দখলের কাজটা ভালোভাবে করে স্পেন। বল দখলে স্প্যানিশরা দাপট দেখালেও প্রথমার্ধে ৩টি আক্রমণের চেষ্টা করে রাশিয়া। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি তারা। তবে ম্যাচের ৪১ মিনিটে গোলের দেখা পায় রাশিয়া।
স্পেনের ডি বক্সের মধ্যে ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের হাতে বল লাগে। রেফারি টিভি রেফারির সহায়তা না নিয়েই পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে রাশিয়াকে খেলায় ফেরান স্ট্রাইকার আরটেম দিজিউবা। ফলে ১-১ সমতা নিয়ে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ করে রাশিয়া ও স্পেন।
প্রথমার্ধে ৭৪ শতাংশ বল দখলে রাখতে পারে স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের চেয়ে বল দখলে রাখাকেই প্রাধান্য দিয়েছে তারা। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে নিজেদের মধ্যে বল আদান-প্রদান করেই সময় নষ্ট করে স্পেন। রাশিয়ার শক্তিশালী রক্ষণদূর্গ ভাঙ্গতে পারলেই কেবল আক্রমণের চেষ্টা করেছে, তাও ২/৩টি। যেগুলো যথার্থ কোন আক্রমণই ছিলো না।
স্পেনের বল দখলের মাঝেও নিজেদের ধৈর্য্যর পরীক্ষা দিয়েছে রাশিয়া। মাথা গরম না করে স্পেনের পাস-পাস খেলার মূর্হুতগুলো উপভোগ করেছে স্বাগতিকরা। ফলে রাশিয়ার রক্ষণদূর্গে ফাটলই ধরাতে পারেনি স্পেন। তাই নির্ধারিত ৯০ ও ইনজুরি সময় ৪ মিনিট শেষেও ১-১ সমতা থাকে। ফলে ম্যাচটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।


অতিরিক্ত সময়েও নিজেদের পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আনেনি স্পেন। বল পাসিংয়ে আরও বেশি মনোনিবেশ করে স্প্যানিশরা। ম্যাচের ১০২ মিনিটে এ ম্যাচে ১’হাজার পাস পূর্ণ করে স্পেন। অনপ্রান্তে স্পেনের এমন কান্ড দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না রাশিয়ার। তবে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ফ্রি-কিক পায় স্পেন। কোকের ফ্রি-কিকে মাথা ছুইয়ে রাশিয়ার গোলমুখে বল পাঠিয়েছিলেন স্পেনের ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে। কিন্তু সেটি সহজেই ধরে ফেলেন ইগর আকিনফিব। ফলে এই অর্ধের খেলাও ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের পাসিং খেলা থেকে বের হয়ে আসে স্পেন। ১০৯ মিনিটে পিকের পাস থেকে বল নিয়ে রদ্রিগো মোরেনো বাঁ-পায়ে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি রাশিয়ার বারের উপরের দিয়ে চলে যায়।
৩ মিনিট পর গোলের সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছিলো স্পেন। ডান-প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে রাশিয়ার গোলমুখে শট নিয়েছিলেন পিকে। কিন্তু ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন রাশিয়ার গোলরক্ষক আকিনফিব। শেষ পর্যন্ত ঐ অর্ধেও গোল না হলে ম্যাচটি পেনাল্টিতে গড়ায়।
সেখানে প্রথম দুই শটে গোল আদায় করে নেয় রাশিয়া ও স্পেন। তবে কোকের নেয়ার তৃতীয় শটটি রুখে দেন রাশিয়ার গোলরক্ষক আকিনফিব। তৃতীয় শটটিতে গোল করে পেনাল্টিতে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় রাশিয়া।
এরপর চতুর্থ শটে দু’দলই করে। এতে পেনাল্টি শুটের স্কোর লাইন দাঁড়ায় ৪-৩। তবে স্পেনের হয়ে আসপাসের নেয়া পঞ্চম শটটি রুখে দিয়ে রাশিয়াকে কোয়ার্টারফাইনালে তুলেন আকিনফিব। পেনাল্টি শুটে ৪-৩ গোলে জিতে শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করে স্বাগতিক রাশিয়া।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে