দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে। একইভাবে বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাকেও দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
দল থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় পঙ্কজ দেবনাথ ও মসিউর রহমান রাঙ্গার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা উঠেছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী তাদের দুজনের সংসদ সদস্য পদ থাকবে বলে মতামত দিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেল তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
এএম আমিন উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলের পদ থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দিলেও তাদের দুজনই সংসদ সদস্য পদে থাকবেন। কারণ তাদেরকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও দল থেকে বহিস্কার করা হয়নি।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেখুন, এ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দুই ক্ষেত্রে করা যাবে। যদি কোনো সংসদ সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করেন। অর্থাৎ যে দল থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, সেই দল থেকে যদি তিনি নিজে পদত্যাগ করেন। আর সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ তার সেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যদি কোনো বিষয়ে ভোট দেন, তাহলেও তার পদ থাকবে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাদের তো দল থেকে বের করে দেওয়া হয়নি। শুধু দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোটও দেননি। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে বলা আছে। তাদের সংসদ সদস্য পদ যাবে না।
একই ধরনের মতামত দিয়েছেন দুনীতি দমন কমিশন (দুদক) সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, দলীয় পদ থেকে এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা ও পঙ্কজ দেবনাথকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও এমপি পদে থাকা নিয়ে তাদের এখনই কোনো সমস্যা নেই। তাদের বিষয়ে দল দুটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা দলীয় গঠনতন্ত্রের বিষয়। সেখানে সংবিধানের অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যার কোনো দরকার হবে না।
খুরশীদ আলম আরও বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। আমরা জানতে পেরেছি, মসিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টি থেকে ও পঙ্কজ দেবনাথকে আওয়ামী লীগের দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছ থেকে একটা ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তারা ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেবেন। ব্যাখ্যা দেওয়ার পর দলীয় ফোরাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হলে কী পদক্ষেপ, সন্তোষজনক না হলে কী পদক্ষেপ, এর ওপর কোনো তদন্ত বা অনুসন্ধান কমিটি হবে কি না, এগুলো সব পার্টিরই গঠনতন্ত্রের আওতাধীন।
তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের যে ইস্যু, তা এখনো সংবিধানের আওতায় আসবে না। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি ফাইনালি তাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন একটি প্রশ্ন উঠবে যে, তাদের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না? আমি এ মুহূর্তে যতটা বুঝতে পারছি, বিষয়টি এখনো সে পর্যন্ত গড়ায়নি। এটি প্রাথমিক স্টেজ। দল ফাইনালি তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
পঙ্কজ দেবনাথ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে চিঠিটি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের কাছে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ অন্যান্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ। এ বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেওয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
মসিউর রহমান রাঙ্গা
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পার্টির যুগ্ম-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম সই করা বিজ্ঞপ্তিতে রাঙ্গাকে অব্যাহতির তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এরইমধ্যে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে।
পরিবহন মালিক সমিতির নেতা রাঙ্গা বর্তমানে রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
২০১৮ সালে রাঙ্গাকে দলের মহাসচিব করেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। পরের বছরর তাকে সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ করা হয়।