প্রশ্নপত্র ফাঁস: অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

সম্পাদকীয়

ফাইল ছবি

সারাদেশে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কতটা অবক্ষয় ঘটেছে, তা শিক্ষক কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা থেকেই উপলব্ধি করা যায়। দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম জেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফাঁস হয়েছে ৭টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র! সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো যে, এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ভুরুঙ্গামারী উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান! তিনি সুরক্ষিত ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র এনে তা শুধু ফাঁসই করেননি, কয়েকজন সহযোগী শিক্ষকের সহায়তায় প্রস্তুত করেন উত্তরপত্রও! এরপর তা নিজের স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন। শিক্ষার্থীরা তা আবার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। এভাবে একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে স্থানীয় প্রশাসন ওই শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় প্রশ্নপত্র। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আলামত জব্দসহ তিনজন শিক্ষককে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি গুরুতর অপরাধ। আর এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যখন স্বয়ং কোনো শিক্ষক, এমনকি প্রধান শিক্ষকও যুক্ত হয়ে পড়েন, তখন তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য নিঃসন্দেহে বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়; একইসঙ্গে ঘটনাটি সামাজিক অবক্ষয়ের নির্দেশক বটে। ক্ষমার অযোগ্য এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা একদিকে যেমন জাতির মেধাবী সন্তানদের বঞ্চিত করছে, অন্যদিকে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কাজেই সমাজ ও রাষ্ট্রকে এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে যে কোনো উপায়ে বাঁচাতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের উৎকর্ষ সাধনে দেশজুড়ে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রসার ঘটাতে হবে এবং দুর্নীতিবাজদের বয়কটে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।

শেয়ার করুন