ভারত জম্মু-কাশ্মিরকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পরিণত করছে : জাতিসংঘে শেহবাজ শরিফ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ছবি : ইন্টারনেট

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ সভায় শুক্রবার বক্তব্য দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বক্তব্যে তিনি তার দেশের বন্যা থেকে শুরু করে ভারত, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, ইসলামোফোবিয়া ও কাশ্মির নিয়ে আলোচনা করেন।

পাকিস্তানের সিন্ধু ও বেলুচিস্তানে ভারী বন্যা নিয়ে বক্তব্য শুরু করে শেহবাজ ভারতের সঙ্গে শান্তির বিষয়েও কথা বলেন।

শেহবাজ শরিফ বলেন, ভারতে ২০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, যা ইসলামোফোবিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ। মুসলিমরা বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি, হিজাব নিষিদ্ধ, মসজিদে হামলার শিকার হচ্ছে।

শেহবাজ শরিফ আরও বলেন, তিনি বিশেষ করে ভারতের কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামোফোবিয়া এখন একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। ৯/১১’র পর থেকে মহামারি আকারে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়, তাদের সম্পর্কে সন্দেহ এবং তাদের প্রতি বৈষম্য বেড়েছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে। সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই। এটি রক্ষণশীলতা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা, অবিচার এবং অজ্ঞতা এবং স্বার্থান্বেষী স্বার্থের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এরপর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগেও যা বলেছেন, সেই একই কথা আরও একবার বললেন শেহবাজ শরিফ। শেহবাজ শরিফ বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বড় শিকার। গত দুই দশকে আমরা সন্ত্রাসী হামলার কারণে ৮০ হাজার মানুষের জীবন ও ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার আধ ঘণ্টার ভাষণে শান্তি ও কাশ্মির সমস্যার সমাধানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান ভারতসহ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তি চায়। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে কাশ্মির সমস্যা সমাধানের ওপর।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা (কাশ্মির) এই বিরোধের মূলে রয়েছে কাশ্মিরের জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার না দেওয়া। ভারত ক্রমাগত কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যা ক্রমাগত ত্বরান্বিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, কারাভোগ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, নির্বিচারে বল প্রয়োগ, ইচ্ছাকৃতভাবে কাশ্মিরি যুবকদের পেলেট গান দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা এবং পুরো সম্প্রদায়কে গণশাস্তি দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে কাশ্মিরিদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।

শেহবাজ শরিফ অভিযোগ করেন, অবৈধ জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু ও কাশ্মিরকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পরিণত করছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণ সব সময় আমাদের কাশ্মীরি ভাই-বোনদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের আওতায় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত তারা পাশে থাকবে।

ভারতকে শেহবাজ শরিফ পরামর্শ দেন, ভারতের উচিত সততা দেখানো এবং ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট নেওয়া বেআইনি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে শান্তি ও আলোচনার পথে হাঁটা।

ভারত বহুবার পুনর্ব্যক্ত করেছে যে জম্মু ও কাশ্মির তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ অঞ্চল সব সময় ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং তা থাকবে।

ভারত বলছে, সন্ত্রাস, সহিংসতা ও শত্রুতার আবহ থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না।

বাইডেন ও শেহবাজের বৈঠক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং সেই সময় তিনি পাকিস্তানের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আগত বিশ্ব নেতাদের জন্য একটি অভ্যর্থনার আয়োজন করেছিলেন। সেখানে দুই নেতার সাক্ষাত হয়।

শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বন্যায় মারা যাওয়াদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এই কঠিন মানবিক সংকট থেকে উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় দেওয়া শেহবাজ শরিফের ভাষণ নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায়।

শেহবাজ শরিফের সমর্থকরা বক্তব্যের জন্য তার প্রশংসা করছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা তার বক্তব্যের সমালোচনা করছেন।

ইমরান খানের দল পিটিআই-এর মহিলা শাখার সভাপতি কানওয়াল শৌজাব, ইমরান খানের শেষ ভাষণের সময় জাতিসংঘের হলের এবং শেহবাজ শরিফের ভাষণের সময় খালি চেয়ারের ছবি টুইট করেছেন।

কানওয়াল লিখেছেন, যখন মুসলিম উম্মাহর একজন সত্যিকারের নেতা কথা বলেন, তখন বিশ্বের বড় বড় নেতারা তা বসে শোনেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ করার পর এখন ভারতের জবাবের অপেক্ষা। মনে করা হচ্ছে, শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ভাষণের সময় পাকিস্তানকে জবাব দেবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

শেয়ার করুন