কোনো চিকিৎসক নেই, বন্ধের পথে স্বাস্থ্যসেবা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

১৯৬৬ সাল। সময়টিতে রেলওয়েতে কর্মরত ও যাত্রীদের চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাংলাদেশ রেলওয়ে চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর স্বাস্থ্যসেবা এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ভৈরব-ময়মনসিংহ রেলপথের প্রায় ১৭০ কিলোমিটার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই চিকিৎসালয়টির স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সুবিধা দিন দিন কমছে। বর্তমানে কোনো চিকিৎসক নেই। দেড় যুগ ধরে পদটি শূন্য। ফার্মাসিস্ট পদটিতেও পদায়ন নেই। লোকবল বলতে একজন মেডিসিন ক্যারিয়ার, একজন পরিচ্ছন্নকর্মী ও একজন নৈশপ্রহরী। এতে চিকিৎসালয়টিতে একপ্রকার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

ভৈরব স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী কিশোর নারায়ণ চৌধুরী বলেন, একসময় চিকিৎসালয়টিতে অনেক সুযোগ সুবিধা ছিল। বিশেষ করে ট্রেন দুর্ঘটনা বা অজ্ঞান পার্টির শিকার যাত্রীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে সমস্যা হতো না। এখন জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের বিকল্প হাসপাতালে পাঠাতে হয়। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি ও বিড়ম্বনা দুই-ই বেড়ে যায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসালয়টির অবস্থান ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন লাগোয়া। ১৭০ কিলোমিটার দূরত্বের স্বাস্থ্যসেবা এলাকা একদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ভৈরব থেকে পূবাইল স্টেশন। অপর দিকে ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাতশালা স্টেশন। ভৈরব-ময়মনসিংহ রেলপথের গৌরিপুর উপজেলার বুকাইনগর স্টেশন। তিন দিকের এই বিস্তৃত রেলপথ এলাকায় কর্মরত রেলওয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বিনা পয়সায় এই চিকিৎসালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা।

একই দূরত্বে যাত্রীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়ার কথা এই চিকিৎসালয় থেকে। দুই যুগ আগেও প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা মিলত। দেড় যুগ আগে একমাত্র চিকিৎসক পদটি শূন্য হওয়ার পর নতুন করে আর পদায়ন হয়নি। ফার্মাসিস্ট পদটিও শূন্য রাখা হয়। এরপর থেকে স্বাস্থ্যসেবা দিন দিন নিচের দিকে নামতে থাকে। তবে বর্তমানে চিকিৎসক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ঢাকায় রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক ইয়াছির আহমেদকে দেওয়া হয়। অভিযোগ, তিনি কয়েক মাসেও ভৈরবমুখী হন না।

ফার্মাসিস্ট পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী রেলওয়ে হাসপাতালের মো. কামরুজ্জামান। ভৈরব ছাড়াও ময়মনসিংহ রেলওয়ে হাসপাতালের অতিরিক্ত দায়িত্ব তার কাঁধে। সপ্তাহের বুধবার ভৈরব চিকিৎসালয়ে তার থাকার কথা। কিন্তু তিনিও পনের দিনের আগে ভৈরবমুখী হতে পারেন না। বর্তমানে তিনি ১৫ দিনের চিত্তবিনোদনের ছুটিতে আছেন। ৮ অক্টোবর তার ছুটি শেষ হওয়ার কথা। এই অবস্থায় এখন মেডিসিন ক্যারিয়ার মজনু মিয়া ভরসা। জরুরি প্রয়োজনে তিনি ফার্মাসিস্টের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে ব্যবস্থাপত্র দেন।

মুঠোফোনে কথা হয় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ইয়াছির আহমেদের সঙ্গে। স্বাস্থ্যসেবার মান তলানিতে নামার কথা স্বীকার করেন তিনি। তবে তিনি এর জন্য দায়ী করেন চিকিৎসক–সংকটকে। তার মতে, একজন চিকিৎসককে দিয়ে একাধিক জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হলে সেবার মান ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মুঠোফোনে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা রিপন দাসের সঙ্গে। তিনি এক বাক্যে বলেন, চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসা চলে না। ভৈরবে চিকিৎসক নেই, চিকিৎসাও নেই।

শেয়ার করুন