রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী পোল্যান্ডে আঘাত হেনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই জরুরি বৈঠক ডেকেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডে সত্যিই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ড়ে পারে। যদিও এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
পোলিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে পোল্যান্ডের প্রজেওডো গ্রামে আঘাত হানে রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রটি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, নিহত দুই ব্যক্তি একটি শস্যকেন্দ্রের কাছে ছিলেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্ররা বলেছে, তারা ঘটনাটির তদন্ত করছে। কিন্তু একটি বিপথগামী রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পোলিশ গ্রামে আঘাত হানার বিষয়ে তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ড। চুক্তি অনুসারে, এই জোটের সদস্যরা সম্মিলিত প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই পোল্যান্ডে রাশিয়ার সামান্য হামলাও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিধি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেছেন, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের পর ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে পরামর্শের জন্য আর্টিকেল ৪-এর অধীনে জরুরি বৈঠক ডেকেছে পোল্যান্ড।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি বলেছেন, এরই মধ্যে বেশ কিছু সামরিক ইউনিটের প্রস্তুতি বাড়াচ্ছেন তারা।
জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে এই মুহূর্তে ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের নেতা। হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পূর্ব পোল্যান্ডে বিস্ফোরণে প্রাণহানির পর বিশ্বনেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বাইডেন। তিনি পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন এবং পোল্যান্ডকে সবধরনের সহযোগিতা দিতে ন্যাটের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ন্যাটোর এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা পোল্যান্ডের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন।
এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছিল, পোল্যান্ডে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে পেন্টাগন, হোয়াইট হাউজ এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তারা এ হামলার সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি এবং আরও তথ্যের জন্য পোলিশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খবরটি ‘অবিশ্বাস্যভাবে উদ্বেগজনক’।
জার্মানি ও কানাডা বলেছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ে বলেছে, তারা আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাজ্য বলেছে, তারা ঘটনাটি ‘অতিগুরুত্ব সহকারে’ দেখছে।
রাশিয়ার অস্বীকৃতি
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পোল্যান্ডে আঘাত করার ঘটনা সংঘাতের ‘উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি’। তবে এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পোলিশ ভূখণ্ডে আঘাত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ধরনের প্রতিবেদনগুলোকে ‘উত্তেজনা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃত উসকানি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউক্রেনীয়-পোলিশ সীমান্তের কাছে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়নি রাশিয়া।
মঙ্গলবার ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিয়েভের দাবি, প্রায় নয় মাস ধরে চলা যুদ্ধে এবারের হামলা ছিল সবচেয়ে জোরালো৷ এদিন কিছু কিছু ক্ষেপণাস্ত্র লভিভ শহরেও আঘাত হেনেছে, যা পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৮০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত।
সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পোল্যান্ডে ইউক্রেনীয় সীমান্তের কাছাকাছি বিস্ফোরণের বিষয়ে আলোচনার জন্য ন্যাটো সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন জোটের মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ। এছাড়া জাতিসংঘে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সার্জি কিসলিয়্যাস বলেছেন, বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও এই ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
সূত্র: রয়টার্স, এপি, সিবিএস নিউজ