ডলার সংকটে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে কমেছে আমদানি-রপ্তানি। ফলে কমতে শুরু করেছে বন্দরের রাজস্ব আয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থলবন্দরের বিশাল এলাকা ফাঁকা পড়ে আছে। বন্দরের গুটিকয়েক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ভুট্টা, চুনাপাথরসহ বিভিন্ন মালামাল ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি করছেন। আর কম পণ্য আমদানি হওয়ায় অনেক শ্রমিককে বন্দরের ইয়ার্ডের পাশে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্যের এলসি নিচ্ছে না। এতে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য কমতে শুরু করছে। বন্দরের গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ভারত থেকে ভুট্টা, চুনাপাথর, গমের ভুসি, ডলোমাইট পাথর, খৈল আমদানি করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে তুলা, ঝুট কাপড়, লোহার গুঁড়া, কিছু খাদ্যসামগ্রী ভারত, ভুটান ও নেপালে যাচ্ছে।
কথা বলে জানা যায়, ডলারের মূল্য স্থিতিশীল না হওয়ায় ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। লোকসানে পড়ার ভয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন।
২০২১-২২ অর্থবছরে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ১৩৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর। তবে এসময়ে আয় হয় ৯১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা কম। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আয় হয় ১১১ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা কম।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৪ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আদায় হয়েছে ৫৬ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ওই অর্থবছরও রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৪৮ কোটি ৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের শ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্দরে কাজ পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। ছয় মাস আগেও ভারত থেকে প্রচুর ট্রাক আসতো। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। আগের মতো আর কাজ নেই।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বকুল হোসেন বলেন, বিশ্বের মন্দার প্রভাব পড়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে। ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি করতে পারছে না। বিশ্ব মন্দা কেটে গেলে আবারও পুরোদমে চালু হবে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, বর্তমানে ভারত ও ভুটানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করে পোষাচ্ছে না। এলসির মাধ্যমে যে পরিমাণে মাল আসছে তাতে লাভ খুব কম হচ্ছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ডেপুটি কমিশনার বিল্লাল হোসেন বলেন, পাঁচ মাস ধরে ডলারের দাম ওঠানামা করায় অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্থলবন্দরে অনেক ব্যবসায়ী বর্তমানে ভুট্টা, চুনাপাথর, গমের ভুসি, খৈল ও ডলোমাইট পাথর আমদানি করছেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন বলেন, ভারত থেকে সীমিত পণ্যবাহী ট্রাক দেশে আসছে। এছাড়া বুধবার (৯ নভেম্বর) ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল বুড়িমারী স্থলবন্দর ও রেলপথ পরিদর্শন করেছে। এতে ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।