তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, ক্ষুব্ধ চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন যুদ্ধজাহাজ। ফাইল ছবি

তাইওয়ান, বাণিজ্যসহ নানা ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। বিদ্যমান এই উত্তেজনা অনেক সময়ই হুঁশিয়ারি ও পাল্টা হুঁশিয়ারিতে সৃষ্টি করে শঙ্কার। আর এই পরিস্থিতিতে স্পর্শকাতর তাইওয়ান প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ওই যুদ্ধজাহাজটি সংবেদনশীল তাইওয়ান প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাত্রা করে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এটিকে রুটিন কার্যকলাপ বলে অভিহিত করলেও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে চীন। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায়ই মার্কিন যুদ্ধজাহাজ এবং কিছু সময়ে ব্রিটেন ও কানাডার মতো মার্কিন মিত্র দেশগুলোর জাহাজও এই প্রণালী দিয়ে যাত্রা করেছে। এসব ঘটনা চীনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মূলত গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে বেইজিং।

এক বিবৃতিতে মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, আরলেই বার্ক-ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার চুং-হুন তাইওয়ান প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছে। তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে চুং-হুনের এই ট্রানজিট মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিকেই তুলে ধরেছে।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকাণ্ডের জবাব বেশ দ্রুত দিয়েছে চীন। ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, চীন দৃঢ়ভাবে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অবিলম্বে সমস্যা উস্কে দেওয়া, উত্তেজনা বৃদ্ধি করা এবং তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজগুলো নৌচলাচলের স্বাধীনতা ভোগের নামে প্রায়ই শক্তি প্রদর্শন করে। এটি এই অঞ্চলকে মুক্ত ও অবাধ রাখার বিষয়ে নয়।’

ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাসের ওই মুখপাত্র তার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চীন উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং যে কোনও সময় সব ধরনের হুমকি ও উস্কানির বিরুদ্ধে জবাব দিতে প্রস্তুত থাকবে। একইসঙ্গে নিজের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে চীন।’

এদিকে চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ ও পাহারা দেওয়ার জন্য তারা সৈন্যদের নিয়োজিত করেছিল এবং ‘সকল কিছুই (আমাদের) নিয়ন্ত্রণে ছিল’।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন যুদ্ধজাহাজটি প্রণালী দিয়ে উত্তর দিকে যাত্রা করেছিল। এছাড়া তাইওয়ানের বাহিনী জাহাজটি চলাচলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে এবং এই সাধারণ ঘটনায় তারা ভিন্ন কিছুই দেখেনি।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

২০২১ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে প্রায়ই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

শেয়ার করুন