‘ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আমার কাছ থেকে ডলার নেন রহমত উল্ল্যাহ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকাই সিনেমার প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেন, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে শাকিবের কাছ থেকে ডলার নেন রহমত উল্ল্যাহ।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে এ মামলা করেন শাকিব।

জবানবন্দিতে শাকিব আরও বলেন, “রহমত উল্ল্যাহ এ ছবির কেউ না। এ ছবির প্রযোজক জানে আলম। রহমত উল্ল্যাহ ঠগ, প্রতারক ও চাঁদাবাজ। আমার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করে সে পার পেয়ে গেলে ভবিষতে অনেকে ভুক্তভোগী হবেন। অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিংয়ে শিডিউল ফাঁসানো ও সহ-নারী প্রযোজককে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলে আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ ডলার নেন রহমত উল্ল্যাহ।”

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিং এর জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাই। সেখানে শিডিউল ফাঁসানো ও সহ-নারী প্রযোজককে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ তোলেন রহমত উল্ল্যাহ। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে এ বিষয় কোনও অভিযোগ নেই। অস্ট্রেলিয়ায় যে নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করার কথা তিনিও কোনও অভিযোগ দেননি।

শাকিব খান আরও বলেন, ছবির বিষয় জানে আলমের সঙ্গে আমার কন্ট্রাক্ট হয়। রহমত উল্ল্যাহ কোনও প্রযোজকই না। তিনি আমার কাছে আরও একলাখ ডলার দাবি করেছেন। চাঁদার টাকা পাওয়ার জন্য আমার ক্যারিয়ার নিয়ে হুমকি দেন রহমত উল্ল্যাহ।

এদিন সকালে আদালতে মামলা করতে আসেন শাকিব খান। এরপর তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। এসময় তার চোখে কালো চশমা ও মাথায় ক্যাপ পরা ছিল। পরনে ছিল সাদা টিশার্ট ও জিন্স প্যান্ট।

শাকিব খানের আইনজীবী মিজানুর রহমান মামুন আসামি রহমত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। আদালত মামলার বিষয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চান আইনজীবীদের কাছে। আইনজীবী তাৎক্ষণিক কাগজ দিতে না পারায় বিচারক মামলা আমলে নিয়ে আসামিকে আগামী ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।

এরপর শাকিব খান একই ঘটনায় মামলা করতে সাইবার ট্রাইব্যুনালে যান। ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোমবার (২৭ মার্চ) তাকে আদালতে আসতে বলেন।

শাকিব খানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিংয়ে শিডিউল ফাঁসানো ও সহ-নারী প্রযোজককে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন রহমত উল্ল্যাহ। এরপর ওই প্রযোজকের নামে মানহানি মামলা করতে গত শনিবার (১৮ মার্চ) রাতে শাকিব গুলশান থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। মামলাটি আদালতে করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। এসময় প্রায় দেড় ঘণ্টা থানার ভেতরে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন শাকিব খান।

সেখান থেকে বেরিয়ে শাকিব খান সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে থানা থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আদালতে মামলা করার জন্য। আমার বিরুদ্ধে যিনি অভিযোগ এনেছেন তিনি আসলে প্রযোজক কি না আপনারা প্রযোজক সমিতিতে গেলেই আসল তথ্য পেয়ে যেতেন। উনি কোনও প্রযোজকই নন। আমার বিরুদ্ধে একটি ভুয়া অভিযোগ এনেছেন। যেহেতু ভুয়া অভিযোগ এসেছে, আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে থানায় এসেছি।

অস্ট্রেলিয়ায় শাকিবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে সে সম্পর্কে ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই শীর্ষ অভিনেতা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার আইন কি এতই দুর্বল যে আমার বিরুদ্ধে সেখানে মামলা হলে বিচার ছাড়াই আমাকে বাংলাদেশে চলে আসতে দেবে? আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন। যে মামলা নম্বর উনি উল্লেখ করেছেন সেটি ভুয়া।

গত ১৫ মার্চ বিকালে সশরীরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে হাজির হয়ে শাকিব খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন রহমত উল্ল্যাহ। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় এক নারী সহ-প্রযোজককে ধর্ষণ করেন শাকিব খান। পরে তিনি দেশে পালিয়ে আসেন। এ অভিযোগের পরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় বিনোদনপাড়ায়।

নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ (২০১৭) সিনেমায় অসদাচরণ; মিথ্যা আশ্বাস; ধর্ষণ ও পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতিসাধন; চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করতে অথবা লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে অভিযোগ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ।

লিখিত অভিযোগ দায়েরের একদিন পরই ১৬ মার্চ রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে এক টেবিলে বসলেন শাকিব খান এবং অভিযোগকারী প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ। এর উদ্যোগ নেন শাকিবের সাবেক স্ত্রী অপু বিশ্বাস। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। তবে এক টেবিলে বসলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনও সুরাহা হয়নি বলে জানা যায়।

শেয়ার করুন