‘৫২ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্যের মান খারাপ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

দেশে ১০০ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ৫২ জনের স্বাস্থ্যের মান খারাপ। আর ৪৮ জনের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান ভালো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক মো. আতিকুল হক তার গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে এই তথ্য উপস্থাপন করেন। বিএসএমএমইউ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শনিবার বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

বিএসএমএমইউর উপস্থাপিত গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে আতিকুল হক বলেন, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান কেমন এবং জীবনযাত্রার ভালো বা খারাপ মানের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণগুলি অনুসন্ধান করা ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য। এতে দেখা যায়, ৫২ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক মানের থেকে কম ছিল, এর মধ্যে পাঁচ শতাংশের জীবনযাত্রার মান অনেক খারাপ ছিল এবং ৪৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক ছিল।

বেশি বয়সী কিশোর কিশোরী, যাদের ভাই বোন বেশি, যাদের বাড়িতে খাদ্য নিরাপত্তা কম, যারা বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক চাপে ভুগছিল তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান খারাপ ছিল। প্রতি ১০০ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ৪৮ জনের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান ভালো। আর বাকি ৫২ জনের মান খারাপ থাকা অবশ্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অবশ্যই কিশোর কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত-জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে এবং এতদ্ববিষয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মানুষের অমূল্য সম্পদ। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। রোগ প্রতিরোধের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিকল্প নাই।

অনুষ্ঠানে কৈশোরকালীন জীবন মান; বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অসংক্রামক রোগ ও ঝুঁকিসমূহ; যেমন খাদ্য, তেমন স্বাস্থ্য; চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষায় বিষয় বাছাইয়ের প্রবণতা ও প্রভাবিত হওয়ার কারণসমূহ এবং কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক গবেষণার ফলাফল যথাক্রমে উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মো. আতিকুল হক, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিজয় কুমার পাল এবং সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হাসিন। পরবর্তীতে মুক্ত অলোচনায় সকলের জন্য সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খানের বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অসংক্রামক রোগ ও ঝুঁকিসমূহ নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে উচ্চ লবণাক্ত এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে শতকরা ৬১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং শতকরা ৪০ জনের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত শর্করা রয়েছে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামানের যেমন খাদ্য, তেমন স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, পাউরুটি, কোমল পানীয়, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই এবং আচার পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি করতে পারে এমন উপাদান যেমন অতিরিক্ত লবণ, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, লেড, ট্রান্স ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিজয় কুমার পালের বিএসএমএমইউয়ে স্নাতকোত্তর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পেশা গঠনে বিশেষত্ব বাছাইয়ের প্রবণতা ও প্রভাবিত হওয়ার কারণসমূহ নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের অনুপাত প্রায় সমান পর্যায়ে পেঁছেছে কিন্তু বিশেষত্ব বাছাইয়ে নারী পুরুষ উভয় শিক্ষার্থী তাদের জেন্ডার অনুযায়ী বিশেষত্ব বাছাইয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক তৈর করতে হবে এবং নারী পুরুষের চাহিদা অনুসারে কাজের সুযোগ তথা কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হাসিনের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ২২ জন কিশোর কিশোরী। কিশোর কিশোরীদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গবেষণা করে দেখা গেছে যারা স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসছে তাদের বেশীরভাগ কিশোরী। অভিভাবক, শিক্ষক এবং সেবা প্রদানকারী কিশোর-কিশোরীদের সেবা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো জেন্ডার রেসপন্সিভ হয়েছে, কিন্তু এই সমস্ত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের গুণগতমান এবং স্থায়ীত্ব বজায় রাখার জন্য এখন কেন্দ্রগুলোকে জেন্ডার ট্রান্সফরমেটিভ অ্যাপ্রোচে কাজ করতে হবে।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন মেডিসিন অনুষদের ডিন মাসুদা বেগম। বিএসএমএমইউর শিক্ষকেরা, চিকিৎসকেরা, ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তারা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন