ঘোরাঘুরি, প্রার্থনা আর শোভাযাত্রায় উৎসবমুখর তিন পার্বত্য জেলা

রাঙামাটি ও বান্দরবান প্রতিনিধি

বর্ষবরণ ও বিদায় ঘিরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবে মুখর হয়ে উঠেছে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চাকমাদের বিজুর দ্বিতীয় দিনে ‘মূল বিজু’তে খানাপিনার উৎসব চলছে। ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের প্রথম দিনে চলছে পূজা–অর্চনা ও বাড়িঘর সাজানো। মারমা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আজ থেকে মারমা, ম্রোসহ পাঁচটি জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং উৎসবও শুরু হয়েছে।

গতকাল বুধবার নদী-হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে চাকমা সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী বিজু উৎসব শুরু হয়। আজ সকাল থেকে খানাপিনা উৎসব চলছে। সকাল থেকে প্রতিটি বাড়িতে খাবার প্রস্তুত করে অতিথি আপ্যায়নের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন বাসিন্দারা। দল বেঁধে এ ঘর থেকে ও ঘরে ঘুরছেন মানুষ। এর মধ্যে শিশু ও কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা বেশি। প্রখর রোদ তাদের ঘোরাঘুরি দমাতে পারেনি।

চাকমাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজুর খানাপিনার মধ্যে মূল আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী সবজি পাজন। এই পাজন রান্নায় কে কত বেশি প্রকার সবজি মেশাতে পারেন, তা নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা হয়। যত বেশি সবজি মেশানো হবে তত ভালো এবং স্বাদও বেশি হয়।

আজ সকাল ৯টায় রাঙামাটি শহরের বনরুপা, ট্রাইবেল আদাম, কল্যাণপুর ও বলপেয়ে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গৃহবধূরা ঐতিহ্যবাহী পাজনসহ নানা খাবার তৈরি করছেন। এরই মধ্যে উৎসবে খাবার খেতে দলবেঁধে ঘুরছে শিশু ও কিশোর–কিশোরীরা। একদিকে খাবার তৈরি করা, অন্যদিকে অতিথি আপ্যায়নে দম ফেলার সুযোগ নেই গৃহিণীদের। বিভিন্ন উপজেলা, গ্রামে ও দুর্গম অঞ্চলেও চলছে অতিথি আপ্যায়ন ও খানাপিনার এই উৎসব।

আগামীকাল শুক্রবার বিজুর উৎসবের তৃতীয় দিন ‘গজ্যাপোজ্জ্যা’। এই দিনে বৌদ্ধ মন্দিরে ও বিহারে পূজা–অর্চনা করা হবে। এদিকে বৈসু উৎসবের প্রথম দিনে আজ পূজা–অর্চনা ও বাড়িঘর সাজানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বৈসুর দ্বিতীয় দিনে অতিথি আপ্যায়ন ও খানাপিনা হবে। তৃতীয় দিনে হাঁস-মুরগি ও পশুপাখিদের খাবার দেওয়া, গরাইয়া নৃত্য ও বয়োজ্যোষ্ঠদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে।

মারমা, ম্রোসহ পাঁচটি জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং উৎসবে মুখর হয়ে উঠেছে বান্দরবান। আজ তাদের ‘সাংগ্রাইং পোয়ে’ বা উৎসব শুরু। এ উপলক্ষে বান্দরবান জেলা শহরে হাজারও শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে। অবশ্য এলাকাভেদে সাংগ্রাই এক দিন আগে–পরে শুরু হয়ে থাকে।

আজ সকাল ৮টায় বান্দরবান শহরের রাজারমাঠ থেকে সাংগ্রাইং গান গেয়ে মারমারা, বাঁশি বাজিয়ে ম্রোরা, ব্যানার ফেস্টুন হাতে খেয়াং, চাক, খুমি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা জড়ো হন। অন্যান্য জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষেরাও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে প্ল্যাকার্ডে ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’, ‘মঙ্গলবার্তা ছড়িয়ে পড়ুক পাহাড়ের কোনায় কোনায়’ স্লোগান লিখে শোভাযাত্রায় আসেন।

শোভাযাত্রার শুরুতে সাংগ্রাইং উৎসব উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এ সময় বান্দরবানের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক লুৎফর রহমান, পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রা জেলা শহরের উজানীপাড়া, মধ্যমপাড়াসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে মিলিত হয়। সেখানে বয়স্ক পূজা ও শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।

শেয়ার করুন