দীর্ঘদিন নিরীক্ষা সম্পাদন না করা, সরকারি পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতাসহ একাধিক অভিযোগে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।
গত এপ্রিলের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের এসব প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিরীক্ষা সম্পাদনের কোনো কার্যক্রম না থাকা, সরকারি পাওনা পরিশোধ না করা, রপ্তানিতে ব্যর্থ হওয়ায় দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ না করা, বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরি করে রপ্তানিতে ব্যর্থ হওয়া, বার্ষিক নিরীক্ষা কাজে অসহযোগিতা, বন্ডিং মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর পরিশোধ না করা, সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া, চাহিত দলিলাদি দাখিল না করা, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করা, দীর্ঘদিন নিরীক্ষা সম্পাদন না করা, বন্ডের মাধ্যমে আমদানিকৃত কাঁচামাল অবৈধ অপসারণ ও ২০১৪ সাল থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশনারেট।
এর মধ্যে বন্ডিং মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর পরিশোধ না করায় আম্বিয়া নিটিং, হিরা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশনের সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।
দাবিনামাভুক্ত রাজস্ব পরিশোধ না করায় ওমর সুলতান ডায়িং, চিটাগাং প্লাস্টিক, ইডেন ফ্যাশন লিমিটেডের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।
বার্ষিক নিরীক্ষা কাজে অসহযোগিতা, দীর্ঘদিন নিরীক্ষা সম্পাদন না করা, নিরীক্ষা অনিস্পন্ন, নিরীক্ষায় অসহযোগিতায় অসম্পূর্ণ, হালনাগাদ নিরীক্ষা না থাকা ও সিস্টেম অডিট সম্পন্ন করায় ওজিকো এপারেল, রিদওয়ান ফ্যাশন, গ্রীন এন্ড হোয়াইট লিমিটেড, জেসএল এপারেল, আলিফ নিট ফ্যাশন, মোমেন এপারেল, প্রিমিয়ার ফ্যাশন ওয়্যার, লেমন্ড এপারেল, ফিতওয়াল সোয়েটার, বিটমন্ড এপারেল, সাদাফ ফ্যাশন, আরজেন্টা গার্মেন্টস, মদিনা এস্টাবলিশমেন্ট, সিলেকশন ফ্যাশন ওয়্যার, ইমতি পলি প্যাকেজিং, সৈয়দ নিটওয়ারস, কেনস বিডি লিমিটেড, কেন্ট ফ্যাশন, শ্যারন চৌ লিমিটেড, জিন্স গার্মেন্টস, ম্যাক্স ব্রাইট লিমিটেড, আইএফসিও গার্মেন্টস, আমিরজা এপ লিমিটেড, সিএন্ডএ টেক্সটাইল, একেবি এক্সেসরিজ, নিটেক্স এপারেল, ফ্যাশন নেক্সট, জবা গার্মেন্টস, এম এস চিটাগাং ফ্যাশনস, প্রমিলা অ্যাপেরেল লিমিটেড, বন্দর নিটিং, এ এন সোয়েটার ক্রাউন অ্যারো লিমিটেড ও ইনজিনাস নিটিংওয়্যারের লাইসেন্স স্থগিত হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারি পাওনা পরিশোধ না করা, অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন না করায় হারভিস কনভার্টিং লিমিটেড, কে ওয়াই স্টিল মিলস লিমিটিড, হংকং ডেনিম লিমিটিড, পিআরএম ফ্যাশল লিমিটিড, ভেলটেক্স ইন্টারন্যাশনাল, জিনিয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, তাকওয়া ফ্যাশন প্রাইভেট লিমিটেডের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ইফা এপারেল, আনজা টেক্সটাইল লিমিটেড, দীর্ঘদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় নূর আলম ফুটওয়্যার, পলিজোন, নুরানী ডায়িং, ইছাকপুর, টিএইচ পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।
রপ্তানির বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল দ্বারা পণ্য তৈরি পূর্বক রপ্তানিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে
মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্কাদি পরিশোধ না করায় সুগার পলি লিমিটেড, মাসকান জিন্স ও প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ায় প্রোগ্রেসিভ থ্রেডের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়া অডিট সম্পন্নের জটিলতায় রুবী কার্টন লিমিটেড, লাক্স লিংজরী, জিন্স এক্সপ্রেস লিমিটেড, ওয়েস্টার ফ্যাশন লিমিটেড, সিএন্ড এ ফ্যাশন লিমিটেডের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমাদনি করে বন্ডেড ওয়্যারহাউসে রাখার সুবিধাও দেওয়া হয়। তবে বন্ডের অপব্যবহার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ডের অপব্যবহারের ফলে আমদানিকৃত কাপড় ও সুতা তুলনামূলকভাবে সস্তায় পাওয়া যায়। সেজন্য দেশে তৈরি কাপড়ের মিল ও স্পিনিং মিলের তৈরি সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে না বা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শত শত ব্যবসায়ী কমিশনারেটে বন্ড সুবিধা প্রাপ্তির আবেদন করে থাকেন। যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সুবিধা দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য এ সুবিধা দেওয়া হলেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ এজেন্টের যোগসাজসে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেট ও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটকে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে বন্ড লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে।