একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে অনিশ্চয়তা ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এ ঘোষণা সেটা কেটে গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির আসার ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। শুধু তাই নয়, নির্বাচনকে প্রতিহত করতে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশজুড়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনাও ঘটে। ওই সব ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। অত্যন্ত প্রতিকূল ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও অনেক আগে থেকেই একটা সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এ নির্বাচনে সব দল আসবে কি-না? নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে কি-না? সেটা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি নির্বাচনের সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির এসব দাবিকে অসাংবিধানিক বলে বার বার নাকোচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচন হবে এবং সংবিধানের বাইরে আওয়ামী লীগ যাবে না বলে দলটি বার বার জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর দুই দফায় বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংলাপে তাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হলেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসবে কি-না তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। তবে রোববার (১১ নভেম্বর) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে আসার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। গত নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনেও একটা অস্থিরতা তৈরি হয় কি-না এমন সংশয় ও আশঙ্কাও দূর হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা স্বস্তির ভাব তৈরি হয়েছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণাকে স্বাগতম জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এক সভায় শেখ হাসিনা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন হবে। আমরা চাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। নির্বাচনে জনগণ যাদেরকে ভোট দেবে তারাই জয়লাভ করবে। আমরা সবাই মিলে নির্বাচন করবো। যেহেতু সবাই নির্বাচন করবে সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটা শুভবুদ্ধির উদয় বলে আমি মনে করি। তারা নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা আশা করছি সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বস্তরের মানুষ উৎসাহ নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এটা খুবই ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি। একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনিশ্চয়তা ছিলো, সেটা কেটে গেলো। তবে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করবে সরকারের ওপর, মানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি প্রশাসনের ওপর।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সব দল নির্বাচনে আসার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। নির্বাচন বর্জন করে সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার মধ্য থেকে তারা বেরিয়ে এসেছে এটা রাজনীতি ও নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে আসার ঘোষণা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আমি মনে করি। এর ফলে একটা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে।
এদিকে বিএনপি জোট শরিক স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের নিবন্ধন ইতোমধ্যেই বাতিল হয়ে গেছে। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত অংশ নিতে পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে জামায়াতকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এর ফলে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।