ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন ও দুর্নীতির কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ও স্যাংশনস দেয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতেই আমেরিকা এ ভিসানীতি ও স্যাংশনস দিয়েছে।
সোমবার (৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমেরিকা আমাদের ওপর ভিসানীতি দেয়, স্যাংশনস দেয়। দুঃশাসন, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের কারণে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব একটি রাষ্ট্রে অন্য দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটা আমাদের জন্য আনন্দের নয়, লজ্জার কথা।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র বাংলাদেশের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার আগে এদেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম হয়েছিল। সব দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। দেশের সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সরকার নিয়ন্ত্রিত মাত্র চারটি পত্রিকা চালু রাখা হয়েছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ও ভোটাধিকার- এ বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী দর্শন এনেছিলেন। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন- ‘গণতন্ত্রকে যদি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়, তাহলে রাজনীতিতে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল পাওয়া যায়’।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান একবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ শুরু করেছিলেন। গ্রাম সরকার ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্যই ছিল জনগণকে ক্ষমতায়িত করা। দেশের বর্তমান অবস্থায় তিনি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা এদেশের মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার বর্বরতা শুরু করল, তখন দেশের জনগণ দিশেহারা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তখন ব্যর্থ হয়েছিল সুনির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে। সেদিন কিন্তু পথ দেখিয়েছিলেন একজন সৈনিক। একজন অখ্যাত মেজর। আমি এখানে কাউকে ছোট করতে চাইনি। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইট ইজ ট্রুথ। এটিতো ধ্রুব তারার মতো। এটি মিথ্যা বলে কীভাবে? তাকে কীভাবে মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে?
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশে যখন সামরিক শাসন এলো, যখন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হলো, স্বৈরাচার এসে গেল, তখন কিন্তু তারই উত্তরসূরি একজন গৃহবধূ (খালেদা জিয়া) জাতীয়বাদের পতাকা, বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়েছিলেন। দীর্ঘ ৯ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করে গণতন্ত্রকে আবারও ফিরে এনেছিলেন।
তিনি বলেন, এ দেশে রাজনৈতিক দলের দাবিতে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এনেছিলেন। ২০০৯ সালে এ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। আদালত বলেছিলেন, আরো দুবার এ ব্যবস্থায় ভোট করা যেতে পারে। কিন্তু তারা তা গায়ের জোরে বাতিল করেছে, এককভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য, একদলীয় শাসন কায়েমের জন্য। সেদিন কিন্তু এক প্রেস কনফারেন্সে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের মধ্য দিয়ে দেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার জন্ম দেওয়া হলো’। তার কথা প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে আমাদের লড়াই করতে হয়। কীভাবে নির্বাচনে যাবো কিংবা নির্বাচনে যাব কি না তা নিয়ে।
তিনি বলেন, আজকে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছে গেছে আওয়ামী লীগ, তারা সম্পূর্ণভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। জনগণের আশপাশে তারা নেই। জোর করে ক্ষমতায় থাকতে তারা সব সাংবিধানিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা ও সেমিনার কমিটির আহ্বায়ক মো. ইসমাইল জবিউল্লাহর সভাপতিত্বে এবং বিএনপি প্রচার সম্পাদক ও সেমিনার কমিটির সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।