সংঘাত-অস্থিরতায় কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরের জীবনব্যবস্থা বিপর্যস্ত। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরের পূর্ণ মালিকানা দাবি করে। এমনকি কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশ দুটি যুদ্ধে পর্যন্ত জড়িয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সশস্ত্র আন্দোলন চলে আসছে। একে কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে।
২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়। একে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এই পদক্ষেপে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। এখন অঞ্চলটি আরেকটি নতুন সংকটে। খবর বিবিসির।
সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, মাদকাসক্তি কাশ্মীরের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাশ্মীরি তরুণদের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে সর্বব্যাপী মাদক। গত মার্চে ভারতের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেশটির সংসদে বলেছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় ১০ লাখ মানুষ গাঁজা, আফিমসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক নেয়। এই সংখ্যা অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ।
এই তথ্যের সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো পরিসংখ্যান হাতে না থাকলেও স্থানীয় চিকিৎসকেরা বলছেন, কাশ্মীরে মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে। ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেসের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ইয়াসির রাথার বলেন, এক দশক আগেও তারা এই হাসপাতালে দিনে ১০ থেকে ১৫ রোগী দেখতেন। কিন্তু এখন তারা দিনে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী দেখেন। এটি উদ্বেগজনক।
কাশ্মীরে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে কর্মসংস্থানের অভাব। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসের ফলে সৃষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টিরও এখানে দায় আছে। কাশ্মীরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা নানা সময় সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তারা বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দের তথ্য জানান। এই জব্দ মাদকের সঙ্গে তারা পাকিস্তানের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মাদক চোরাচালানের অর্থ কাশ্মীরে জঙ্গিবাদের অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু স্থানীয় কিছু মাদক ব্যবসায়ী বিবিসিকে বলেন, তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও মাদকের চালান পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি যেমন আছে, তেমন আছে পাঞ্জাবও।
অঞ্চলটিতে মাদকের অপব্যবহার নতুন কোনো সমস্যা নয়। তবে চিকিৎসক ইয়াসির বলেন, আগে এখানকার (কাশ্মীর) লোকজন গাঁজা বা অন্যান্য মাদক গ্রহণ করত। আগে এখানে হেরোইনের ব্যবহার ছিল না। কিন্তু এখন তা দেখা যাচ্ছে।
গত বছর জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কাশ্মীরের ৫২ হাজারের বেশি মানুষ হেরোইন ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, একজন মাদক ব্যবহারকারী এই হেরোইন পেতে মাসে গড়ে প্রায় ৮৮ হাজার রুপি খরচ করেন।