রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। গত সপ্তাহে শুরু হওয়া এই হামলার জেরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ফ্রন্ট লাইনে তীব্র সংঘাত চলছে। তবে সেই সংঘাতের মধ্যেও সফলতা পাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
সর্বশেষ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের আরও একটি গ্রাম দখলে নিয়েছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। সোমবার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাল্টা হামলার জেরে সম্মুখ সমরে ভয়াবহ লড়াইয়ের মধ্যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা একটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে। জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত ওই গ্রামটির নাম পিয়াতিখাটকি। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে কিয়েভের দীর্ঘ প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ওই ফ্রন্টে এটি ইউক্রেনীয় সেনাদের দ্বিতীয় সাফল্য।
ওই অঞ্চলের রাশিয়ান-নিযুক্ত কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ বলেছেন, ইউক্রেন ওই এলাকার ‘পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ’ নিয়েছে এবং রুশ সেনারা গোলাবর্ষণের মাধ্যমে পাল্টা আক্রমণ করার চেষ্টা করছে।
টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে রোগভ বলেছেন, ‘প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও শত্রুর ‘ঢেউয়ের মতো’ এসব আক্রমণ ইতিবাচক ফলাফল এনে দিয়েছে।’
এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি এবং আল জাজিরাও যুদ্ধক্ষেত্রের এসব রিপোর্ট স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে ইউক্রেন গত ১২ জুন জানিয়েছিল, পিয়াতিখাটকির পাশের গ্রাম লোবকোভের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের রোববার প্রকাশিত মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জাপোরিজিয়ায় সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে। এছাড়া বাখমুত শহরের চারপাশে এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কেও যুদ্ধ চলছে বলে এতে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেন এই এলাকায় আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে রয়েছে এবং ‘ছোট অগ্রগতিও অর্জন করেছে’। অন্যদিকে রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের দক্ষিণে ‘তুলনামূলক কার্যকর প্রতিরক্ষামূলক অভিযান’ চালাচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম ওডেসা প্রদেশের আঞ্চলিক সরকারের মুখপাত্র সেরহি ব্রাচুক বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী নিকটবর্তী খেরসন প্রদেশের রুশ-অধিকৃত বন্দর শহর হেনিচেস্কের কাছে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ একটি গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংস করেছে।
ব্রাচুক তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সকালে বেশ বড় আঘাত করেছে।’
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা এবং সামরিক কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, রাশিয়ান বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশটির ১০০০-কিমি (৬২০ মাইল) ফ্রন্ট বরাবর ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
আল জাজিরা বলছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার দৈনিক আপডেটে জাপোরিঝিয়ার পিয়াতিখাটকি গ্রামের বিষয়ে কোনও কথা উল্লেখ করেনি। তবে রুশ এই মন্ত্রণালয় বলেছে, তার বাহিনী সম্মুখ সমরের তিনটি বিভাগে ইউক্রেনের আক্রমণ প্রতিহত করেছে।
অবশ্য রাশিয়ার ভোস্টক গ্রুপ অব ফোর্সের পৃথক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে ওই এলাকাটি দখলে নিতে ব্যর্থ হয়েছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রোববার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া ৪৩টি বিমান হামলা, চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ৫১টি রকেট হামলা চালিয়েছে।