নির্বাচনে প্রার্থী হতে হরষপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের জনগণের অনুমতি নিলেন মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়ন ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

৮ জুলাই (শনিবার) সকালে হরষপুর ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে এবং বিকেলে পাহাড়পুর ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। এসময় দুই ইউনিয়নের জনগণের কাছ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি নেন তিনি।

হরষপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় মোকতাদির চৌধুরী এমপি উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্য বলেন, আমি গত পাঁচ বছরে আপনাদের জন্য যা কাজ করেছি, তা আপনারা কতটুকু সন্তুষ্ট আর কতটুকু অসন্তুষ্ট তা জানতে এসেছি, আপনারা আমাকে খোলামেলা বলবেন। এসময় উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ হাত উঁচিয়ে বলেন আমরা সকলেই সন্তুষ্ট। তখন মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, এখন আমি আপনাদের কাছে সরাসরি জানতে চাই- আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন নিয়ে আমি প্রার্থী হই, এটা কী আপনারা চান? তখনও সবাই দুই হাত উঁচিয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন জানান।

উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমরা রাস্তাগুলো একাধিকবার সংস্কার করেছি কিন্তু রাস্তাগুলো ঠিক থাকে না,ভেঙে যায়। এগুলো ভেঙে যায় কিছুটা আমাদের দোষে, কিছুটা কনট্রাকটরের দোষে। সরকারেরও দোষ নাই, এমপি সাহেবেরও দোষ নাই। আমরা টাকা যোগাড় করে আনি, এটি করতে কষ্ট হয় কিন্তু। টাকা যোগাড় করা এতো সহজ না। কাজ এনে কনট্রাকটর তো আমি হতে পারি না। আমি এসবে হস্তক্ষেপও করি না। তবে রাস্তার কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে আমি কনট্রাকটরকে ৪/৫ বার ডেকেছি; ডেকে অনুনয়-বিনয় করেছি, গালাগালিও করেছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দুইটি রোড বিজয়নগরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, একটা হলো হরষপুরের এই রোডটা, আরেকটা হলো চম্পকনগর-আউলিয়া বাজার রোডটা। দুইটার কাজ-ই একজন কনট্রাকটরের হাতে। কনট্রাকটর কিন্তু আমি নির্বাচিত করিনা। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন কোনো কনট্রাকটরের পক্ষে আমি কথা বলি না। অন্যান্য এলাকার এমপি সাহেবরা হয়তো সুপারিশ করে কিন্তু আমি কারো পক্ষে সুপারিশ করি না। এই বিষয় নিয়ে গত পড়শু দিন পার্লামেন্টে একটি বড় সভা ছিল সেই সভায়ও কনট্রাকটদের এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই রাস্তা দুটি দ্রুতই সম্পন্ন হবে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বিড়াল সাদা বা কালো তা বড় কথা নয়; বিড়াল ইঁদুর মারে কিনা তা দেখতে হবে। সারাদেশের বিড়াল হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিড়াল হলাম আমি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। কামাল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কাজের কিনা সেই বিষয়টি বিবেচ্য। সারাদেশে দুইজন কামলা আছেন। একজন হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আরেকজন হলাম আমি। প্রধানমন্ত্রী হলেন সমগ্র দেশের কামলা। তিনি দিনরাত দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন এবং আমি হলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামলা, আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সুতরাং যেই কামলা আপনাদের জন্যই কাজ করে, তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে আপনারা নিজের ক্ষতি করিয়েন না।

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, আপনাদের এলাকা খুবই ধর্মপ্রাণ এলাকা, আপনাদের মানুষজন খুবই ধর্মপ্রাণ। ইসলাম ৫টি স্তম্ভের উপর দাড়িয়ে আছে, যথা কালেমা নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ। এরমধ্যে হজ ও যাকাত শুধু ধনীদের জন্য, আর বাকি তিনটি ধনী-গরিব সবার জন্য প্রযোজ্য। কাজেই কাউকে যদি কালেমা পড়তে দেখেন কিংবা হজ করতে দেখেন তাকে অমুসলিম বলিয়েন না। শরিয়ত কোনো মুসলমানকে অমুসলিম বা কাফের বলতে নিষিদ্ধ করেছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে কাফের বা অমুসলিম বলে অভিযুক্ত করল, অথচ এটি সত্য নয়, তাহলে ওই অভিযোগ তার ওপরই বর্তাবে।’

জেলার জনপ্রিয় এই সংসদ সদস্য বলেন, হাদিসে আছে,’মুনাফেকের লক্ষণ হলো তিনটি। যারা মিথ্যা কথা বলে, যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না, আর যারা আমানত খিয়ানত করে।’ ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না, কারণ আপনারা ভোট দেননি। আমরা এই সিটটি পায়নি হারুন সাহেব পেয়েছিল। সেসময় তারা ওয়াদা করেছিল- ক্ষমতায় আসলে এই অঞ্চলের ইউনিয়নগুলো নিয়ে আলাদা একটি উপজেলা করবে; করেনি কিন্তু। সুতরাং মিথ্যা কথা, ওয়াদা খেলাফ ও আমানতে খেয়ানত তিনটায় কিন্তু একসঙ্গে করেছে। এগুলো খেয়াল রাখবেন। আমি এই কথাগুলো আপনাদেরকে বলতাম না। বললাম এইজন্য যে, কিছু কিছু মানুষ আপনাদের কাছে এসে বলবে- ওনি (উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী) তো ঈমানদার মানুষ না। আমার ঈমান আছে কি নাই, সেটি তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দেখবেন, মানুষের বিচারের কোনো ক্ষমতা নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমি একটি গল্প বলি- কিছুদিন আগে এক ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেন, আমি অমুক একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম (মদের বার) সেখানে আপনার এলাকার বহু লোককে দেখলাম চাকরি করতে; আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কী বলল? ভদ্রলোক বললেন, তারা আপনার সম্পর্কে খুব ভালো বলছে, কিন্তু তারা একটা কথা বলছে আপনি ইসলাম পছন্দ করেন না! আমি বললাম, বলতেই পারে তারা;কারণ মদের দোকানে বসে যদি ইসলাম পছন্দ কে আর ইসলাম পছন্দ কে না, এটি যদি বিচার করতে পারে, সেক্ষেত্রে আমার তো কিছু বলার নাই! তারপর একজনের নাম বলল, যিনি ঐ মদের দোকানের মালিক। ওনার সম্পর্কে খুব প্রশংসা করেছে, খুব ভালো মানুষ এবং ওনি ইসলাম পছন্দ! ওনি মদ বিক্রি করে যে টাকা পায় সেটি দিয়ে সংসার চালিয়ে যেই টাকা অবশিষ্ট থাকে তা থেকে কিছু টাকা মসজিদ ও মাদ্রাসায় দান করেন এজন্য তিনি ইসলাম পছন্দ!

মোকতাদির চৌধুরী, মদ হলো হারাম, মদ বিক্রি হলো হারাম, এই দুটি হারাম কাজ করে; এটি থেকে উপার্জিত অর্থ আপনি যদি মসজিদে দেন, আপনি যদি মাদ্রাসায় দেন তা জায়েজ হবে কিনা তা বড় মাদ্রাসার আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করিয়েন।

শেয়ার করুন