দেশে দারিদ্র্য ও হত দরিদ্র্যের হার কমলেও অনেক পিছিয়ে আছে উত্তরাঞ্চলীয় দুই জেলা কুড়িগ্রাম ও জামালপুর।যে কারণে সরকার জেলা দুটির কয়েকটি উপজেলা চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব মতে, ২০১৮ সালে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ আর হত দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলার দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮০ শতাংশ, ও হত দারিদ্র্যের হার ৬৪ দশমিক ২০ শতাংশ। অপরদিকে জামালপুর জেলার দারিদ্র্যের হার ৫২ দশমিক ৫০ শতাংশ, এবং হত দারিদ্র্যের হার ৪৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
জানা যায়, প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) বগুড়ার উদ্ভাবিত মডেল ও প্রযুক্তি। সরকারের নিজস্ব তহবিলে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোট আটটি উপজেলার ২৫ হাজার হত দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘পশ্চাৎপদ কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পটির জন্য কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মলোন্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এই ৮ উপজেলার ২৫ হাজার মানুষ উপকৃত হবে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৫ কেটি ১৫ লাখ টাকা। এর পুরোটাই যোগান দেওয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), বগুড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) বলা হয়েছে, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে (ফিজিবিলিটি স্টাডি) পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ও বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি আলাদাভাবে দুই জেলায় মাঠ পর্যায়ের জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপের আলোকেই ‘পশ্চাৎপদ কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ প্রকল্পের আটটি উপজেলা চিহ্নিত করা হয়েছে।
ডিপিপিতে বলা হয়েছে, দরিদ্র জনগণের আয় বাড়ানোর মাধ্যমে জেলা দুটির দারিদ্র্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় হত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে গাভী ও ষাঁড় বিতরণ করা হবে। কৃত্রিম প্রজননের জন্য সংগ্রহ করা হবে ১০টি উন্নত ষাড় ও গাভী। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর গবাদিপশু পালন ও উন্নয়ন প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণে মোট ৫৬০ জনকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা হবে। প্রতি উপজেলায় ২টি করে ৮ উপজেলায় মোট ১৬টি প্রদর্শনী মৎস্য খামার স্থাপন করা হবে এবং ৬৪০ জন সুফলভোগীকে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। গবাদিপশু পালন ও মাছ চাষ উন্নয়নের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে ১৫৬ জন সার্ভিস প্রোভাইডার সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্প এলাকায় উদ্যোক্তা উন্নয়নের লক্ষ্যে ৮ হাজার সুফলভোগীকে বিভিন্ন আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ সব কাজে ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ বঞ্চিত এলাকায় ৫০টি সৌরশক্তি নির্ভর স্বয়ংক্রিয় রোড লাইট স্থাপন করা হবে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায়, প্রতি উপজেলায় ১টি করে মোট ৮টি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ কেন্দ্র (চাল ও আট মিল, স্পোয়লার, মধু প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট, চিলিং প্লান্ট, ফ্রিজিং এ্যান্ড রেফ্রিজারেটর ইউনিট) স্থাপন করা হবে। কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সেন্টারের জন্য ৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতি উপজেলায় ১টি করে মোট ৮টি কমিউনিটি ভিত্তিক বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি ও আইসিটি নির্ভর প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গবাদি প্রাণির জাত উন্নয়ন করা হবে এবং প্রকল্পের সুফলভোগীদের সামাজিক অবস্থার (যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিরাপদ পানি স্যানিটেশন সামাজিক সচেতনতা, নারীর ক্ষমতায়ন) উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল জানিয়েছেন, অতি দারিদ্র্যের হার বিশ্ব গড় দারিদ্র্য হারের নিচে আছে। তিনি বলেন, যেভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্য হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। অতি দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের কম হলেই তা শূন্য দারিদ্র্য হিসেবে ধরা হয়। এ লক্ষ্য অর্জনেই এ বিশেষ প্রকল্প নিয়েছে সরকার।