বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক চাপটা আছে, তারপরও আমি বলব আমাদের অর্থনীতি গতিশীল।
বুধবার গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের র্শীষ নেতাদের বৈঠকে তিনি একথা বলেন। সন্ধ্যার সাড়ে সাতটার দিকে শুরু হয় বৈঠক। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠক শেষ হয় রাত পৌনে ১১টার দিকে।
বৈঠকের শুরুতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া। আমরা সমাজের সবদিক থেকে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন মোটামুটি ভাবে এমন জায়গায় আছি, অর্থনৈতিক চাপটা আছে, ডলারের ক্রাইসিস সারা বিশ্বব্যাপী, আমাদের ওপরও আছে। তারপরও আমি বলব আমাদের অর্থনীতি গতিশীল আছে। এবারও আমরা সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের চালের অভাব নাই। আমাদের চাল এবং অন্যান্য ফসল প্রচুর পরিমাণে আছে। আজকে আমাকে খাদ্যমন্ত্রী বলেছে আমাদের তো চাল রাখার জায়গা নেই। এখন জায়গা খালি করি কীভাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যাদেরকে আমরা রেশন দিই, যেমন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আছে, পুলিশ বাহিনী আছে, তাদের যাদের যাদের রাখার ব্যবস্থা আছে তাদের আমরা একবারে তিন মাসেরটা দিয়ে দেব।
তিনি বলেন, ভিজিডি, ভিজিএফ মাসে মাসে দিই সেটাও দরকার হয় তিন মাসেরটা একবারে দিয়ে সেখানে আমরা জায়গা করব এবং সেখানে নতুন করে আবার খাদ্য মজুদ করব। যাতে ভবিষ্যতে কোনো দুযোর্গে সমস্যা না হয়।
গ্রামে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হয়তো ঢাকা শহর সবাই দেখেন, গ্রামের দিকে যাননি। গ্রামের মানুষ, গ্রামে কিন্তু কোনো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নাই। আজকেও আমি খবর নিলাম। বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা এসেছিলেন, জিজ্ঞেস করলাম কী অবস্থা, বলে এখানে দাম বেশি, আমাদের ওখানে সব ঠিক আছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি সেটাও কার্যকর করতে হবে। সেখানে কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের আসবে। সে প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মানুষ অন্তত খেয়ে-পড়ে ভালো আছে। এখন বর্ষাকালেও শীতকালের সবজি দেখেন। সবই পাওয়া যায়। আবার সেটা দাম বেশি হলে সবাই চিৎকার-চেচামেচিও করে। কিন্তু আগে তো এগুলো পাওয়াই যেতো না। এখন সবই পাওয়া যাচ্ছে। আমরা একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি; ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ২০০৮ এ আমরা ঘোষণা দিয়েছি ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন আমরা ঘোষণা দিয়েছি স্মার্ট বাংলাদেশ করব।
‘পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। পদ্মা সেতু, এই একটা সিদ্ধান্ত, এখন সবাই বাংলাদেশকে সমীহ করে। পদ্মা সেতুতে দক্ষিণের মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে গেছে।’
বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াসহ ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৪ দলের নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, পলিট ব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু , সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি জহির হাসান, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের সভাপতি আইভী আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুক, গণ-আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাড. এস. কে শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. অসিত বরণ রায়, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, সদস্য হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজাহার, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মহাসচিব ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।