দাদনের টাকার জন্য নারী শ্রমিককে পিটিয়ে মারলেন তিনি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

পিটিয়ে হত্যা
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এক নারী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। দাদনের টাকার জন্য ঘর থেকে ধরে এনে রাস্তার ওপর ওই নারীকে বেধড়কভাবে মারধর করা হয়। এ সময় তার ছেলে, মেয়ে ও দুই বোনও আহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা দুইটার দিকে উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের ইন্দাচুল্লি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ ওঠা ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম নূরে আলম। তিনি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ইন্দাচুল্লি গ্রামের বাসিন্দা। অপর দিকে নিহত নারীর নাম বিলকিস বেগম (৪০)। তিনি ইন্দাচুল্লি গ্রামে আবদুল করিমের স্ত্রী ছিলেন।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, বিলকিস বেগমসহ তার পরিবারের সবাই চট্টগ্রামের একটি ইটখলায় কাজ করতেন। বর্ষাকালে ইটখলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম ও তার ভাই সুজন মিয়া বিভিন্ন ইটখলায় শ্রমিক সরবরাহ করেন। বিলকিস বেগমের স্বামী আবদুল করিম গত বছর সুজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা দাদন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেন।

স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা বলেন, বাকি ৬০ হাজার টাকার জন্য সুজন ও নূরে আলম রোববার দুপুরে বিলকিসের বাড়িতে যান। তখন বিলকিসের স্বামী আবদুল করিম বাড়ি ছিলেন না। পাওনা টাকা নিয়ে বিলকিসের সঙ্গে নূরে আলমের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নূরে আলম ক্ষিপ্ত হয়ে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে বিলকিস বেগমকে বাড়ির সামনে পাকা রাস্তায় নিয়ে যান। তখন তাকে কিল, ঘুষি, লাথি দেওয়াসহ লাঠি দিয়ে বেধড়কভাবে মারধর করা হয়। মারধরের পর ওই নারী অচেতন হয়ে যান।

বিলকিস বেগমের ছেলে মো. মাসুম (২৩) বলেন, তার মাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও পিটিয়ে আহত করেন নূরে আলম। একই সঙ্গে তার বোন রোজিনা এবং দুই খালা জান্নাত বেগম ও শরিফা আক্তারকেও মারধর করা হয়। মারধরে তার মা অচেতন হয়ে গেলে তিনি তাকে কোলে তুলে স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যান। ওষুধের দোকান থেকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে আর নিতে পারেননি, তার মা আগেই মারা যান।

মাসুম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার মাকে পেটানোর সময় আমি নূরে আলমের হাতে–পায়ে ধরে বলেছি, আমরা টাকা পরিশোধ করে দেব। আপনি মাকে মারবেন না। কিন্তু তিনি এসব শোনেননি, সবাইকে পিটিয়েছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের রক্ষা করতে কেউ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।

গুণধর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সায়েম রাসেল ভূঁইয়া জানান, দাদনের টাকার জন্য ওই নারীসহ তার পরিবারের লোকজনকে মারধর করা হয়েছে বলে শুনেছেন। পরে ওই নারী মারা গেছেন।

ঘটনার পর নূরে আলম আত্মগোপন করেছেন। তবে তার ভাই সুজন মিয়াকে পুলিশ আটক করেছে। মুঠোফোনে নূরে আলমকে কল দেওয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়

শেয়ার করুন