নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ‘একা একা খেতে চাও, দরজা বন্ধ করে খাও’ চিপসের একটি বিজ্ঞাপনের এই সংলাপ ছিল দর্শকদের মুখে মুখে। একটি সংলাপ দিয়েই রীতিমতো তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন শিশু চরিত্রের মডেল মোহাম্মদ সাদ হোসাইন। এরপরে আর অভিনয়ে নিয়মিত হননি এই সাদ। কয়েক বছর আগে গুজব ছড়িয়েছিল, ডেঙ্গুতে এই অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে। সেই থেকে তিনি আড়ালে। ফেরেননি অভিনয়ে। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পরে গতকাল রাতে জানা গেল, এবার আর গুজব নয়, সত্যি সত্যিই মারা গিয়েছেন ‘একা একা খেতে চাও, দরজা বন্ধ করে খাও’ খ্যাত এই অভিনেতা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কামরুজ্জামান অনি, তার বোনের স্বামী সাদ।
কীভাবে মারা গিয়েছেন জানতে চাইলে আজ রোববার বিকেলে কামরুজ্জামান বলেন, সাদ আমার বয়সী ছিল। তার বয়স হয়েছিল ৩৯ বছরের মতো। কয়েক বছর আগে তার লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। পুরো নষ্ট হয়ে যায়। এটা নিয়েই অসুস্থ ছিল। দুই বছর আগে অপারেশন করা হয়। তার পর থেকে মোটামুটি ভালোই ছিল। মাঝেমধ্যে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতো। এর মধ্যে হঠাৎ করে তিনদিন আগে সাদ অসুস্থ হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে ছিল, গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
অপারেশনের পর চিকিৎসকদের দেখাতে হতো। পরে চিকিৎসায় ভালো হলে পরিবারের লোকেরা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। হয়তো একসঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারবেন। সেভাবেই হাসিখুশি থাকতেন সাদ। কামরুজ্জামান বলেন, এমন কিছু হবে কেউ বুঝতে পারিনি। তিনদিন আগে সে নিজেই হেঁটে হাসপাতালে গিয়েছে। তখন প্রাথমিক চিকিৎসা দরকার ছিল। পরে হঠাৎ করেই হাসপাতালে বমি করে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে কোমায় রাখা হয়। স্ত্রী-ছেলে কারও সঙ্গেই শেষবারের মতো কথা বলে যেতে পারেনি। কথাগুলো বলে কাঁদছিলেন কামরুজ্জামান।
সাদ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। সেখানে সাদের ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসা নিজেই দেখাশোনা করতেন। সাদ ছিলেন মা–বাবার এক ছেলে সন্তান। সেই ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রুবি হোসাইন ও বাবা মোশারফ হোসাইন। কামরুজ্জামান বলেন, সাদের মা-বাবা চেষ্টা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। তাদের একমাত্র ছেলে, যে কারণে তারা একদম ভেঙে পড়েছেন। কোনো কথা বলতে পারছেন না। আপনারা সাদের আত্মার জন্য দোয়া করবেন। তার মা-বাবা যেন এই শোক সহ্য করতে পারেন, সেই শক্তির জন্য দোয়া করবেন।
সাদ বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। মা–বাবার সঙ্গে থাকতেন সেগুনবাগিচার বাসায়। তারা এক ভাই ও এক বোন। জানা যায়, সাদ ২০১২ সালে বিয়ে করেন। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। দেশে তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা ছিল। বিদেশে গিয়েও ব্যবসার সঙ্গে জড়ান। ব্যস্ত সময় পার করতেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৭ সালে দেশে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি নিউইয়র্কে স্ত্রী–সন্তানসহ থাকতেন। তার জায়ান নামে পাঁচ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে জ্যামাইকা মসজিদে তার জানাজা হবে। পরে নিউইয়র্কের একটি কবরে দাফন করা হবে।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে হঠাৎ অভিনয়ে পা রাখেন সাদ। তবে অভিনয় নিয়ে তার আগ্রহ কম ছিল। সবশেষে কামরুজ্জামান বলেন, আমার বোনের সঙ্গে বিয়ের সময়ে ফেসবুকে তাদের ছবি পোস্ট করেছিলাম। সেই ছবি দেখে তখন অনেকে বলেছিলেন তারা শুনেছেন, একা একা খেতে চাও, দরজা বন্ধ করে খাও সংলাপ দেওয়া ছেলেটি মারা গিয়েছেন। পরে বেঁচে থাকার খবরে অনেকে অবাক হন। সে সত্যিই এবার আমাদের ছেড়ে চলে গেল।