নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আর মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও বিএনপি তাদের ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে পারেনি। আসন বণ্টন নিয়ে জটিল আবর্তে রয়েছে বিএনপি। তবে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে কারও অযৌক্তিক দাবি মানা হবে না, যোগ্য প্রার্থী হলেই কেবল তাদের দাবি মানা হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
গত দুই দিন এনিয়ে সিরিজ বৈঠক চলছে। তবে বিএনপির প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাত অবধি এবং গতকাল সারাদিন দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা ৩০০ আসনের তালিকা নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাদের সাথে এই বৈঠকে স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডন থেকে সরাসরি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারা যে কোনভাবে জয়লাভ করতে পারে এমন প্রার্থীদের চূড়ান্ত করেছেন। পাশাপাশি জোট ও ফ্রন্টকে যে যে আসনে ছাড় দিতে চায় সেসব আসন ফাকা রেখে দিয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ২০ দলীয় (২৩ দল) জোটের চাইতে ৪টি দলের ঐক্যফ্রন্টের আসন চাওয়ার বহর দেখে আমরা হতবাক। ঐক্যফ্রন্ট ২১৫টি আসন দাবি করে তালিকা দিয়েছে। তার মধ্যে ঐক্যফ্রন্টে থাকা গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জেএসডি মিলে ২শ’র বেশি আসনের জন্য দর-কষাকষি করছে।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম ও ঐক্য প্রক্রিয়া চেয়েছে ১৬০টি, আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি ২০টি আর মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ৩৫টি আসন। এর পরে আবদুল কাদের সিদ্দিকী চেয়েছে ২০টির মতো। এর বাইরে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী,এলডিপিসহ অন্যরা আরো শতাধিক আসন চেয়েছে।
তাদেরকে এই চাওয়ার দশভাগের এক ভাগ দিলেও বিএনপির আর কিছু থাকবে না। এনিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। একটা সমাধানে আসতে হবে। আর সেজন্য হাতে সময়ও কম। আমরা ঢাকাতে ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট নেতাদের মনোনয়ন দিতে চাচ্ছি। কিন্তু তারা চান তাদের নিজ নিজ এলাকায়। যেখানে তাদের পাশ করে আসা অনায়াস সাধ্য হবে না।
এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির নামে বানরের পিঠা ভাগ হবে না। যোগ্য ও জনগণের মনের মানুষেরই মনোনয়ন দেয়া হবে।
তিনি বলেন, যে সমস্ত প্রার্থী জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে,তাদেরকে আমরা মনোনয়ন দেবার জন্য সুপারিশ করবো। অন্যায় কোনো আবদার আমরা কেউই করব না। এমন কী জামায়াতকে আমরা বলব, কোনো অন্যায় আবদার না করার জন্য। আমি মনে করি ঐক্যফ্রন্টে যারা আছে তারা সকলে শিক্ষিত। দেশের পরিস্থিতি তারা বোঝে। কেউ ব্যর্থ হবার জন্য আসন নেবেন এটা আমি বিশ্বাস করি না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, আমাদের সাথে দুটি রাজনৈতিক জোটে রয়েছে ২৭টি দল (জোটের ২৩ দল+ ঐক্যফ্রন্টের ৪ দল)।
সবমিলিয়ে বিএনপি এখন দুই জোটের শরিকদের কিভাবে সন্তুষ্ট করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করছে। মনোনয়নে কোনো দিনও সকলের মন খুশি করা যায় না। মনোনয়ন হচ্ছে সবচাইতে জটিল বিষয়। উইনেবল প্রার্থী হলে শরিকদের আসন ছাড় দিতে আপত্তি নেই আমাদের।
গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা ১৬০টি আসন দাবি করেছি। তবে একটি আসন নিয়েও আমরা কোনো ঝুঁকিতে যাব না। অন্যান্য শরিক দলের চেয়ে যদি আমাদের প্রার্থী যোগ্য হয়, জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি হয়,আমরা সেটা নিয়ে কথা বলব।
এ দিকে জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধন বাতিলের জটিলতার মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী পরিকল্পনা করলেও এই সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটা সরে আসছে দলটি। ধানের শীষ প্রতীকে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আগামীকালের মধ্যে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াত।
ইতিমধ্যে জামায়াত নেতারা ৬৪টি আসনে রিটার্নিং অফিস থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। জামায়াত ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা দলীয় মনোনয়নের চিঠি নেয়া হবে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের জানান,২০ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের মতো জামায়াতও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চাইছে ২৫০টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে। বাকি ৫০টি আসন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলকে ছেড়ে দিতে। ৫০ আসন নিয়ে সমঝোতা না হলে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৬৫টি আসন শরিকদের দিতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ২০ দলকে ৩৫ থেকে ৪০টি আসন দিতে চায় বিএনপি। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৫ থেকে ২০টি আসনে ছাড় দিতে চাইছে দলটি।
আসন বন্টন নিয়ে বিএনপির সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা হেভিওয়েট প্রার্থীদের নিয়ে। অন্তত ২০ থেকে ৩০টি আসনে দুই শরিক দলগুলোর একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। যারা কেউ কাউকে সহজেই ছাড় দিতে চান না। জানা গেছে, আসন ছাড়ের ক্ষেত্রে সংখ্যা নয়, জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেবে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আসন বণ্টন নিয়ে জোটের শরিকদের মধ্যে কোনো সমস্যা হবে না। সবাই ছাড় দেয়ার মানসিকতা পোষণ করছেন। কারণ এ মুহূর্তে সবার লক্ষ্য দুঃশাসন থেকে মুক্তি। এদিকে ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক বরকতুল্লাহ বুলু জানানআজ কালের মদ্রে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করা হবে।