আনসারে বিদ্রোহ-ষড়যন্ত্রের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

আনসার ব্যাটেলিয়নে বিদ্রোহ বা ষড়যন্ত্র করলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটেলিয়ান আইন-২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্রোহে প্ররোচনা, উপস্থিত থাকা, বিদ্রোহের তথ্য থাকলে অবহিত না করা এমন ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মতো গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এছাড়া সরকারি বা ব্যাটালিয়নের সম্পদ চুরি, প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, বিনা নোটিশ অফিসে অনুপস্থিতর জন্যও আলাদা সাজার বিধান রাখা হয়ছে নতুন আইনে।

তিনি আরও বলেন, ছোট অপরাধরে জন্য ডিজির নেতৃত্ব বিচার হবে এবং বড় অপরাধে প্রচলিত আইনে বিচার হবে।

এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সেসময়ও আনসার ব্যাটালিয়নের কোনও সদস্য বিদ্রোহ বা বিদ্রোহের প্ররোচনা দিলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে আইনের খসড়ায়।

আইনের খসড়ায় আনসার বাহিনীর সদস্যদের অপরাধের বিচারের জন্য দুটি আদালত থাকবে। একটি সংক্ষিপ্ত আনসার ব্যাটালিয়ান আদালত ও অপরটি বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ান আদালত। সাধারণ অপরাধের বিচার হবে সংক্ষিপ্ত আনসার ব্যাটালিয়ান আদালতে। এসব অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আর শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অপরাধ বা বিদ্রোহের বিচার হবে বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালতে। এ আদালত সংঘটিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা ন্যূনতম ৫ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারবে। এ দুই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য একটি আপিল ট্রাইব্যুনাল থাকবে।

আনসার ভিডিপির ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং তৎকালীন পূর্ববাংলা আইন পরিষদে আনসার এ্যাক্ট অনুমোদিত হলে ১৭ জুন ১৯৪৮ সালে তা কার্যকর হয়। তখন থেকে এ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে দেশের সীমান্ত ফাঁড়িগুলোতে আনসারদের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর) এর শপথ গ্রহণ শেষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে ১২ জন আনসার বাহিনীর সদস্য গার্ড অব অনার প্রদান করে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আনসার বাহিনীকে বিদ্রোহী আখ্যায়িত করে বিলুপ্ত করা হয়। প্রায় ৪০ হাজার রাইফেল নিয়ে আনসার সদস্যরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা, ৪ জন কর্মচারী ও ৬৫৭ জন আনসারসহ সর্বমোট ৬৭০ জন শহীদ হন। বাহিনীর ১ জন বীর বিক্রম এবং ২ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার অদূরে সাভারে আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও ১৯৮০ সালে শহর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে এ দুটি বাহিনীই আনসার বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯৭৬ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে জাতীয় আনসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এনএটিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে এর নামকরণ হয় আনসার ট্রেনিং স্কুল। ১৯৮৬ সালে আনসার ট্রেনিং স্কুলকে আনসার একাডেমিতে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৫ সালে এর নামকরণ হয় আনসার-ভিডিপি একাডেমি। বাহিনী বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে আনসার বাহিনী আইন-১৯৯৫ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার আইন ১৯৯৫- দ্বারা, যা সংসদ কর্তৃক গৃহীত হলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ হতে কার্যকর হয়। এ দুটো আইন অনুসারে সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী আনসার বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী।

শেয়ার করুন