পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা করছে। কিশোর গ্যাং, ভাড়াটে খুনি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, ছিনতাই কিংবা ডাকাতি মামলার আসামি, অবৈধ অস্ত্রের জোগানদাতা, মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত এবং এর পেছনের ইন্ধনদাতাদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জামিনে বের হওয়া অপরাধীদের ওপরও নজরদারি রাখা হচ্ছে। কারা কোন কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে কোথায় যাচ্ছে, কোথায় অবস্থান নিচ্ছে, সেসব বিষয়েও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এছাড়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে অপরাধীরা যেন অবৈধ অস্ত্রের জোগান না পায়, সে ব্যাপারেও জোগানদাতাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ এবং তথ্য আপডেট রাখা তাদের নিয়মিত কাজের অংশ।
সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার অন্যতম সন্ত্রাসী মামুন হামলার শিকার হয়। পুলিশের সূত্র বলছে, কারাগারে থাকা অবস্থায় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে মামুনের মনোমালিন্য হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় জেলে থাকা ইমনের ইন্ধনে মামুনের ওপরে সশস্ত্র হামলা করে সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন পথচারী মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার এবং ব্যবহৃত অস্ত্রটি এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও তারা বলছে, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
র্যাব বলছে, একদিকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের তৎপরতা, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারের জন্য অস্ত্রবাজি, অপরদিকে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা যেন দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে—সে ব্যাপারে সজাগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিনিয়ত এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তথ্য আপডেট করা হচ্ছে। এছাড়া জননিরাপত্তার পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই ও জনগণের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত হয়ে অবৈধ অস্ত্র দেশে ঢুকছে। আর এসব অস্ত্র অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। যখনই কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হচ্ছে।
রাজধানীতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর সংখ্যা কত—সে বিষয়ে গণমাধ্যমকে কোনও স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয় না। বাহিনীগুলোর দাবি, তাদের নিজস্ব ডাটাবেজে অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষিত আছে। প্রতিনিয়ত যা আপডেট করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে ভাড়াটে খুনিদের তৎপরতা বেড়েছে। আর এসব ভাড়াটে খুনিদের হাতে নানা প্রক্রিয়ায় এসে যাচ্ছে নানা ধরনের অবৈধ অস্ত্র। এসব অবৈধ অস্ত্র দিয়েই সন্ত্রাসীরা ঘটিয়ে চলছে নানা ধরনের সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। জামিনে বের হয়ে আসা সন্ত্রাসী কিংবা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিষয়টিও নজরদারির মধ্যে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘র্যাবের যত ব্যাটালিয়ন রয়েছে, সব ব্যাটালিয়নকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকাভিত্তিক ছোট বড় সন্ত্রাসী এবং তাদের অনুসারীদের তালিকা করতে। এছাড়া অপরাধ করে কারা কারাগারে আছে এবং কারা বাইরে রয়েছে, তারও তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।’