ডলারসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন ভারসাম্য ও দেশি–বিদেশি বন্ডে বিনিয়োগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঢাকা সফররত দাতা সংস্থাটির প্রতিনিধি দল এসব তথ্য সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব আয়-ব্যয়, মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা, মানবসম্পদের তথ্যসহ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ হিসাবের বিস্তারিত তথ্য নিচ্ছে তারা। তথ্য সংগ্রহকালে আইএমএফের প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে সারসংক্ষেপের ওপর বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক জুলহাস উদ্দিন, গবেষণা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক লুৎফে বেগমসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সফররত আইএমএফ’র সদস্যরা ডলারের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ডলারের হিসাবে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে মতামত দিয়েছেন তারা। তাছাড়া ডলারে বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বন্ডের বিষয়ে উপস্থাপিত প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে দাতা সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের সঙ্গে গভর্নরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় একাধিক দল অংশগ্রহণ করে। আইএমএফের বৈঠকে আগে উপস্থাপিত পরামর্শ, অর্জন ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশদ আলোচনা চলবে।
সূত্রমতে, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে পূর্বশর্তগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ। সংস্থাটি রিজার্ভ, বাজারভিত্তিক ডলারের রেট, ঋণখেলাপি, রাজস্ব সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনাসহ ৪৭টি শর্তে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছিল। বাংলাদেশ অধিকাংশ শর্ত পূরণ করতে পারলেও রিজার্ভে উন্নতি, কর-জিডিপি অনুপাত এবং বাজারভিত্তিক ডলার রেটের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়। এসব বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। তবে বাস্তবতার আলোকে শর্ত পূরণে সময় আরও বাড়াতে পারে আইএমএফ।
আইএমএফের শর্তানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভের (এনআইআর) পরিমাণ ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা ছিল। জুলাইয়ের জন্য ছিল ২৪ দশমিক ৪৬ বিলয়ন ডলার। তবে গত বুধবার দেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। আর সেখান থেকে অন্যান্য দায় বাদ দিলে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নের নিচে নেমে যায়।
সংস্থাটি দেশের ব্যাংক, রাজস্ব ও পুঁজিবাজারসহ মোট ৪৭টি খাতে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। সংস্কার প্রস্তাব ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যার প্রথম কিস্তি গত ফেব্রুয়ারিতে পেয়েছে বাংলাদেশ। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ মিলবে নভেম্বরে।