আরও একটি অঘটনের সাক্ষী হলো ২০২৩ সালের ভারত বিশ্বকাপ । দ্বিতীয়বারের মত শক্তিশালী কোনো দলকে হারালো আফগানিস্তান। প্রথমে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলো হাশমতউল্লাহ শহিদিরা। এবার চেন্নাইয়ে আরেক শক্তিশালী দেশ পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক তৈরি করেছে আফগানরা।
এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট পাকিস্তানকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। বাবর আজমদের ছুঁড়ে দেয়া ২৮২ রানের চ্যালেঞ্জ মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৪৯ ওভারেই পার করে ফেলে আফগানরা।
সে সঙ্গে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাসও গড়লো আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা। কারণ ওয়ানডেতে এর আগে কখনো পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি তারা। এবার খোদ বিশ্বকাপে এসেই প্রথমবারের মত পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নিলো তারা।
এই ম্যাচ নামার আগে কে ভেবেছিল পাকিস্তানের এমন করুণ পরিণতি হবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৭ বারের দেখায় কোনবারই হারের মুখ দেখেনি পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানকেই ইতিহাসে প্রথমবারের মত ওয়ানডেতে হারিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করলো আফগানিস্তান।
বিশ্বকাপে এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়লাভ করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল আফগানিস্তান। এরপরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে কিছুটা পথভ্রষ্ট হয়েছিল হাশমতউল্লাহ শহিদিরা; কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষেই নিজেদের জাত চেনালো রশিদ খানরা। বাবর আজমদের উপর ছড়ি ঘুরালো যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটি।
২৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই পাকিস্তানি বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাট করতে থাকে আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইবরাহিম জারদান। প্রথম ওভারেই শাহিন আফ্রিদির বলে ১০ রান নেন আফগান দুই ওপেনার।
পাকিস্তানি বোলারদের তুলোধুনো করতে থাকেন দুই ওপেনার। পাওয়ারপ্লের প্রথম দশ ওভারেই কোন উইকেট না হারিয়ে ৬০ রান তোলে আফগানরা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে তখন পর্যন্ত এটিই ছিল পাওয়ার-প্লেতে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ রান।
শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, হাসান আলি, উসামা মিরদের কেউই কোন সুবিধা করতে পারছিলেন দুই আফগান ওপেনারের সামনে। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে একের পর একে চার ও ছক্কা আদায় করে নিচ্ছিলেন এই দুই ওপেনার।
ম্যাচের ১৬তম ওভারেই দলের শতরান পূরণ করেন দুই ওপেনার। গুরবাজ ও জাদরান ওয়ানডেতে এই নিয়ে চতুর্থবার শতরানের জুটি গড়লো।
এর আগে ১৫তম ওভারে নিজের অর্ধশত রানে পৌঁছান ইবরাহিম জাদরান। গুরবাজও পিছিয়ে থাকেননি। তিনিও পরের ওভারে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। বিশ ওভারে ১২৮ রান করে আফগানিস্তান গুরবাজ ও জাদরানের কল্যাণে।
এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল এই দুই ব্যাটারই খেলা শেষ করে আসবেন, যেভাবে তারা অনায়াসে পাকিস্তানি বোলারদের চার-ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন। কিন্তু অবশেষে তাদের জুটিতে ফাটল ধরান শাহিন আফ্রিদি। দলীয় ১৩০ রানে গুরবাজকে ৬৫ রানে আউট করে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনি।
এক উইকেট পড়ে গেলেও রানের চাকা সচল রাখে আফগানিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহকে নিয়ে ৬০ রানের জুটি গড়েন জাদরান। এক পর্যায়ে যখন মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি তুলে নিবেন, ঠিক তখনই আউট হয়ে বসেন ওপেনার জাদরান। ব্যক্তিগত ৮৭ রানে জাদরানকে আউট করেন হাসান আলী।
১৯০ রানে দুই উইকেট হারালেও খেই হারায়নি আফগানরা। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৯৬ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে মাঠ ছাড়েন রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি। রহমত শাহ ৭৭ রান ও হাশমতউল্লাহ ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রান সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান। বাবর আজমের ৭৪ রানের ইনিংসের পর আবদুল্লাহ শফিক ৫৮, শাদাব খান ও ইফতিখার আহমেদ করেন ৪০ রান করে।
চেন্নাইয়ের উইকেট টিপিক্যাল স্পিনিং বান্ধব। আফগানিস্তানের স্পিনারদের বিপক্ষে পাকিস্তানি ব্যাটাররা কী করেন, সেটাই ছিল দেখার। রশিদ খানের সঙ্গে মুজিব-উর রহমান, মোহাম্মদ নবির সঙ্গে উঠতি স্পিনার নুর আহমাদকেও একাদশে নেয়া হয়। সে সঙ্গে পেসার ছিলেন নাভিন-উল হক এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর উদ্বোধনী জুটিতে ইমাম-উল হক এবং আবদুল্লাহ শফিকি মিলে ৫৬ রান তোলেন। ২২ বলে ১৭ রান করে আউট হন ইমামড়-উল হক। এরপর ৫৪ রানের জুটি গড়েন আবদুল্লাহ শফিকি এবং বাবর আজম। ৭৫ বলে ৫৮ রান করে আউট হন আবদুল্লাহ শফিক। বাবর আজম করেন ৯২ বলে ৭৪ রান।
১০ বলে ৮ রান করে বিদায় নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৩৪ বলে ২৫ রান করে আউট হন সউদ শাকিল। তবে শেষ দিকে শাদাব খান এবং ইফতিখার মিলে ৭৩ রানের ঝোড়ো জুটি গড়েন। ৩৮ বলে ৪০ রান করেন শাদাব খান এবং ইফতিখার আহমেদ ২৭ বলে খেলেন ৪০ রানের ইনিংস।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। নুর আহমাদ নেন ৩ উইকেট। নাভিন-উল হক নেন ২টি এবং ১টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ নবি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই।