ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাতের এক মাস পূর্ণ হলো আজ। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় ক্রমাগত পাল্টা আক্রমন করতে থাকে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি হামলা এতটাই তীব্র রূপ নিয়েছে যে, গত এক মাসে সেখানে যত হতাহত হয়েছে তা ২১ মাসে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের হতাহতের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। খবর বিবিসির।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চার হাজারের বেশিই শিশু। সব মিলিয়ে এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে গাজার অন্তত ২০ লাখ মানুষ। হামলা থেকে বাঁচতে সবাই দক্ষিণের পথে পা বাড়ালেও জাতিসংঘ বলছে গাজার কোনো জায়গায়ই এখন নিরাপদ নয়।
এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত পার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই এই লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের। মিশরের সীমান্ত ঘেঁষা রাফাহ ক্রসিংও খোলা হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকটে অবরুদ্ধ গাজার লাখ লাখ মানুষ এক প্রকার মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইহুদীদের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুকত শেষ হবার পরপরই ভোর থেকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট হামলা শুরু হয়। এর মধ্যেই হামাসের কিছু সদস্য দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে। এজন্য শুরুতে তারা সীমান্ত বেষ্টনীতে থাকা পর্যবেক্ষণ সরঞ্জামে ড্রোন হামলা চালায়। এরপর বিস্ফোরক এবং যানবাহন ব্যবহার করে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তত ৮০টি জায়গা ভেঙে তারা ইসরায়েলে প্রবেশ করে।
এসব কাজে মোটরচালিত হ্যাং-গ্লাইডার অর্থাৎ অনেকটা প্যারাসুটের মতো দেখতে মানববাহী বাহন এবং মোটরবাইকও ব্যবহার করে তারা। এভাবে গাজা থেকে হাজারো হামাস সদস্য একাধিক স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রমণ চালাতে শুরু করে।
হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে একটি অংশ সামরিক ফাঁড়িগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এরপর তারা ইসরায়েল থেকে ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে বন্দি করে সীমান্তের সুড়ঙ্গ পথগুলো দিয়ে গাজা উপত্যকায় নিয়ে যায়। এরপর থেকেই গাজায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাচ্ছেন।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই নারী ও শিশু।
যদিও ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই হিসেব বিশ্বাস করে না। দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের ফিলিস্তিনি শাখার কর্মকর্তা জেসন লি গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, সেখানে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে যত মানুষ আহত হয়েছে তাদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনই শিশু।
এদিকে জাতিসংঘের হিসেবে, ২১ মাস আগে রাশিয়ার পুরো মাত্রায় ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রায় ৯ হাজার ৭০০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যতজন নিহত হয়েছে এই এক মাসে তার চাইতেও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা।