ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক দিক থেকে বৈধ। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট এই রাজ্যের জন্য নির্ধারিত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ করার যে সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি নিয়েছিলেন, তা অসাংবিধানিক নয়। কারণ, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল এক অস্থায়ী ব্যবস্থা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ সোমবার এই রায় দেন।
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানিয়েছেন, ভারতে অন্তর্ভুক্তির সময়েই জম্মু-কাশ্মীর তার সার্বভৌমত্বের অধিকার হারিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এখন থেকে ইতিহাস।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। কত দ্রুত, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করেননি। তবে রায়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন করতে হবে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে বিধানসভার শেষ নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের সেই বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়। সেই অর্থে গত ৯ বছর সেখানে বিধানসভার ভোট হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এ কথাও বলা হয়েছে, লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার সিদ্ধান্তও বৈধ।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের জন্য সংবিধান প্রদত্ত বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। বাতিল করে দেওয়া হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে গড়ে তোলা হয় দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। একটি জম্মু-কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ। দুই অঞ্চলের দায়িত্ব বর্তায় দুই উপরাজ্যপালের ওপর।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে একাধিক মামলা দাখিল হয়েছিল। এসব মামলায় ওই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। প্রায় সাড়ে চার বছর পর প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ওই মামলাগুলো এক করে শুনানি শুরু করেন। ২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া শুনানি ১৬ দিন চলার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর বেঞ্চ রায় দান স্থগিত রাখেন।
বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন সঞ্জয় কিষাণ কল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই ও সূর্য কান্ত।
এই রায়কে কেন্দ্র করে জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আজ সকালেই পিডিপি নেত্রী ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দী করে রাখার অভিযোগ ওঠে। প্রায় একই সময় ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, তাদের নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকেও গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
অবশ্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসন কাউকে গৃহবন্দী করে রাখার বিষয় স্বীকার করেনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।