দুর্নীতিতে নিমজ্জিত না হওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জিরো টলারেন্স। আমরাও বলছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কোনো টলারেন্স নাই, দেখেন আপনি। কিছুদিন দেখেন, আমার নজরে আসুক দুর্নীতি। সচিব আমার পাশে আছেন, আমরা কেউই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হবো না, অন্যদেরও অবগাহন করতে দেবো না, নিশ্চিত থাকেন।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ কথা বলেন। গত ১১ জানুয়ারি দায়িত্ব পাওয়ার পর এই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আস্থা রেখে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন, এই দায়িত্ব পালনে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। দায়িত্বপালনের সময় যদি আমি কোনো অপরাধমূলক কাজ করি তাহলে অবশ্যই সেটা আপনারা হিসাবে নেবেন। কিন্তু আমি যেন বারবার অপতথ্যের শিকার না হই। একবার নাসিরনগর নিয়ে অপতথ্যের শিকার হয়েছি। একবার হেফাজত নিয়ে অপতথ্যের শিকার হয়েছি। মনের মাধুরী মিশিয়ে যা ইচ্ছে তাই লেখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভুল তথ্য দিয়ে একটা কাজ করা যায়। আপনি মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলতে পারেন। একটা মানুষের পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন। এই অপতথ্যের ব্যবসা যারা করে এটা যে তাদের জীবনেও আসতে পারে সেটা অনেকেই উপলব্ধি করেন না। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এবং অভিযোগের সত্যতা থাকলে অবশ্যই লিখতে পারেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমি যদি অপরাধমূলক কাজ করি, নিশ্চয়ই আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা না। আমার পেরিফেরিতে যদি অন্য কেউ অপরাধমূলক কাজ করে, আপনারা যদি তুলে ধরেন, আমার জন্য সুবিধা হবে। আমি সেটা সংশোধনের চেষ্টা করবো।
প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। আপনার মন্ত্রণালয় নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী- এ বিষয়ে নতুন মন্ত্রী বলেন, আমার পরিকল্পনা খুব সিম্পল। আমি দক্ষতা, যোগ্যতার এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে চাই। এটা যদি আমি করতে পারি, এটাই আমার চ্যালেঞ্জ, এটাই আমার পরিকল্পনা।
আপনি আপনার মন্ত্রণালয়ের কোন কোন জায়গায় আলো ফেলতে চান- এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে হাত দেওয়া দরকার, সব জায়গায় আমি হাত দেওয়ার চেষ্টা করবো আমার সাধ্য অনুযায়ী।
বিভিন্ন সময়ে সম্ভাব্যতা যাচাই না করে স্থাপনা করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আপনার অবস্থান কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, কাজে লাগে না, এমন কাজ যদি করে থাকে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। সেগুলো যাতে কাজে লাগানো যায় সেই চেষ্টা করবো।
একটি নিউজ এসেছে ‘প্লট-ফ্ল্যাট ভাগাভাগিতে সচিব ও চেয়ারম্যান’। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, মাত্র তো খবর হয়েছে। খবরটা আমি পড়ে, অনুসন্ধান করে দেখি, এর সত্যতা আছে কি না। সত্যতা থাকলে এর যাতে প্রতিকার হয়, সেটার চেষ্টা করবো।
‘রাজউকে ঘুস ছাড়া ফাইল নড়ে না’- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে সেই বিষয়ে আমরা নজর দেবো। সেই বিষয়ে আপনি নিশ্চিত থাকেন।
ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেবেন- জানতে চাইলে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমরা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একত্রে কাজ করবো। পরিবেশের দূষণ হয়, এমন কোনো কাজের সঙ্গে আমার মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করতে চাই না।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগে অনিয়মসহ সেখানকার নানা অসঙ্গগতি খতিয়ে দেখবেন জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অফিসারদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে, প্রয়োজনবোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যদি অনিয়মগুলো দূর করা সম্ভব হয়, সেটা আমরা করবো। আমাকে সময় দেন, আমি করবো ইনশাআল্লাহ।
গ্রাম ধ্বংস করে নগরায়ন করা হলে, সেটি কতটা চ্যালেঞ্জ হবে আপনার জন্য- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করবো এবং অচিরেই স্থানীয় সরকার, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে আমরা বসবো। আগামী বা পরের সপ্তাহে আমরা একটা সভা করবো।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, গ্রামে এখন অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি করার নিয়ম নেই। এই আইনের যাতে প্রয়োজনীয় বিধান করা হয়, সেটা আমরা দেখবো। প্রতি বছর আমরা এক শতাংশ হেক্টর কৃষি জমি হারাই। এটা আমাদের জন্য হেলদি কোনো সিচুয়েশন না। এটা বন্ধ করতে হবে।
এ সময়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটবেলায় গ্রামে আমরা প্রচুর খাল ও নালা দেখেছি। নালাতে যে পানি আসে, সেই পানিতে সেচ দেওয়া হয়, সেটা দেখার সৌভাগ্য আপনাদের অনেকের হয়নি। কারণ আপনাদের আমলে এটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি, কীভাবে সেচ করা হয়। সেই অবস্থাটা এখন নেই। তবে সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবো; সেটা বলবো না। তবে ভূ-উপরিভাগের পানি যাতে ব্যবহার করা হয় কৃষিকাজে, সেটার জন্য যা যা করা দরকার।
অপরিকল্পিত নগরায়ন অথবা অপরিকল্পিত গ্রামায়ন বা গ্রামীণ আবাসন- দুটোই বন্ধ করতে হবে বলেও জানান গণপূর্তমন্ত্রী।
সাংবাদিকরা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরলে মন্ত্রী সেগুলো দূর করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি কাজ আইন মেনে চলবে এটাই স্বাভাবিক, আমি আইনের ভেতর থেকে যা যা করা দরকার সব করবো। আপনি দেখেন, দেখতে থাকেন। হিন্দিতে বলে- দেখতে যাইয়ে। দেখতে থাকেন, আমি কতটা আইন মানি কী, মানি না।
এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।