পুতিনের সমালোচকদের পরিণতি ভয়ংকর হয়

মত ও পথ ডেস্ক

ভ্লাদিমির পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

রাশিয়ার কারাবন্দী বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনায় সরব পশ্চিমা বিশ্ব। ৪৭ বছর বয়সী নাভালনি পুতিনের কঠোর সমালোচক ছিলেন। গত এক দশকে রাশিয়ায় বিরোধী নেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন নাভালনি। রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের একটি কারাগারে গত শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। খবর আল জাজিরার।

শুধু নাভালনিই নন, পুতিনের আরও অনেক সমালোচককে একই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। আলেক্সান্দার লিৎভিনেঙ্কো ছিলেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির একজন সদস্য এবং পুতিনের সমালোচক। ২০০৬ সালে চা পান করার পর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তার চায়ে মেশানো ছিল তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ পোলোনিয়াম-২১০।

ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা পুতিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন লিৎভিনেঙ্কো। এ ছাড়া মস্কোয় অ্যাপার্টমেন্টে বোমা হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ১৯৯৯ সালে চেচেন যুদ্ধ শুরু করা হয়। পুতিনই ওই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন লিৎভিনেঙ্কো। যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন লিৎভিনেঙ্কো। লন্ডনে দুই রুশ গোয়েন্দার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চা পান করেছিলেন তিনি। বলা হয়ে থাকে, পুতিন এই হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছিলেন।

রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস নেমসভকে ২০১৫ সালে গুলি করে হত্যা করা হয়। ক্রেমলিনের কাছে মস্কোয় একটি সেতু পার হয়ে হেঁটে বাড়ি যাওয়ার পথে তাকে গুলি করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করায় পুতিনের সমালোচনা করে আসছিলেন ৫৫ বছর বয়সী নেমসভ। পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভগুলোতে তিনি নিয়মিতই অংশ নিতেন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় পাঁচ চেচেনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে এই খুনের হোতাকে শনাক্ত করা যায়নি। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্রেমলিন এবং পুতিনের মিত্র চেচেন নেতা রমজান কাদিরভের প্রতি আঙুল তোলেন নেমসভের মিত্ররা।
ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন ক্রেমলিনের সমালোচক ছিলেন না। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কয়েক মাস মিত্র পুতিনের সঙ্গে তিক্ততার সৃষ্টি হয়।

বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধে তার যোদ্ধাদের ভূমিকার কল্যাণে রাশিয়ায় প্রিগোশিনের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এ যুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেন তিনি। পরে ২০২৩ সালের আগস্টে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন ভাগনারপ্রধান।

৬২ বছর বয়সী প্রিগোশিন ওই বছরের জুনে তিনি নিজের যোদ্ধাদের রাশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর রোস্তভ-অন-দনের দিকে যাত্রা করার নির্দেশ দেন। তখন এক ভাষণে পুতিন বলেছিলেন, এই ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তবে ভাগনারপ্রধানকে গুপ্তহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন। এ ছাড়া পুতিনের সমালোচনার জন্য সুপরিচিত অনেকেই নির্বাসনে কিংবা কারাগারে রয়েছেন। পুতিনের সমালোচক ধনকুবের মিখাইল খোদোরকোভস্কি এক দশক কারাভোগের পর ২০১৩ সালে দেশ ছাড়েন।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করায় বিরোধী রাজনীতিক ভ্লাদিমির কারা-মুরজাকে গত বছরের এপ্রিলে ২৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়। ইউরোপে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন বিখ্যাত লেখক বরিস আকুনিন।

শেয়ার করুন