১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকার ছাত্রজনতা। তৎক্ষনাৎ রাজপথে বের করা হয় প্রতিবাদ মিছিল। সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, এমনই একটি মিছিল আমিও দাঁড় করাতে পেরেছিলাম এবং একসময় মিছিলটি বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে আসা আরেকটি মিছিলের সঙ্গে একাকার হয়ে আমরা একটি বিশাল মিছিল করেছিলাম। বেগম মতিয়া চৌধুরীর সেটা মনে না-ও থাকতে পারে। কারণ তিনি এখন অনেক বড় মাপের মানুষ। সব কথা তাদের মনে থাকে না। কিন্তু আমি ক্ষুদ্র মানুষ, আমার জীবনের একটি বৃহৎ ঘটনা সেটি, তাই আমি ভুলতে পারি নাই। এটা আমার মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমি মনে রাখব। ছাত্রসংগ্রাম পর্ষদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলা হলো- ইয়াহিয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে ২ তারিখে কলাভবন চত্বরে ছাত্রজনতার সমাবেশ হবে। কলাভবনের চত্বরে সেদিন সভা হয়েছিল। দীর্ঘ ৫২ বছর পর প্রথমবারের মতো জনাব আ স ম রব স্বীকার করেছেন- সেদিন যে পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, সেই পতাকাটি ছিল ছাত্র সংগ্রাম পর্ষদের পক্ষ থেকে উত্তোলন। মঞ্চে আ স ম রব একা ছিলেন না। মঞ্চে ছাত্র সংগ্রাম পর্ষদের নেতা আ স ম রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ ছিলেন এবং সৌভাগ্যবশত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঐ মঞ্চে আমারও উঠার সৌভাগ্য হয়েছিল।
কলাভবনের কলা অনুষদের সামনের যে গাড়ি বারান্দাটা আছে, এই গাড়ি বারান্দার টপে সব নেতৃবৃন্দ দাঁড়িয়েছিলেন। মিটিং চলার কিছুক্ষণ পরে একটি পতাকা আসলো। পতাকাটি অকষ্মাৎ কিছু নয়। এই পতাকাটির একটা ইতিহাস আছে। ইতিহাস হলো, এই পতাকাটির নাম হলো- সার্জেন্ট জহুর (সার্জেন্ট জহুরুল হক) রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগ। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সার্জেন্ট জহুরকে ক্যান্টনমেন্টের কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর সম্মানে ছাত্রলীগের উদ্যোগে সার্জেন্ট জহুর বাহিনী নামে একটি বাহিনী গঠিত হয়েছিল। সেই সার্জেন্ট জহুর বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি পতাকা তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগ হিসেবে মার্চপাস্ট করে দেওয়া হয়েছিল পল্টন ময়দানে। আজকে ইতিহাসের একটি কথা বলি- ঐ মার্চপাস্টে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যিনি সার্জেন্ট জহুর রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে অর্পণ করেছিলেন (হাঁটু ঘেরে যেভাবে একজন সৈনিক তার সেনাপতির কাছে রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগ তুলে ধরেন, সেভাবে দিয়েছিলেন) তিনি শেখ কামাল।
আমরা যাঁরা ইতিহাসের অংশ, আমরা সবাই জানি- সেটি দিয়েছিলেন শেখ কামাল। সেই রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগটিই ২ মার্চে কলাভবন চত্বরে এসেছিল এবং সেটিকে বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে গ্রহণ করে উত্তোলন করা হয়েছিল। রব ভাই প্রথম এটা তুলেন এবং সঙ্গে সকল ছাত্রনেতা এটাকে স্পর্শ করেছিলেন। কিন্তু তখনও এটাকে বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়েছে ৩ মার্চ। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্র-শ্রমিক সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। সকল ছাত্রনেতা, শ্রমিক নেতা ছিলেন সেখানে। বঙ্গবন্ধুর সাথে তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক এসেছিলেন। সেই সভায় নূরে আলম সিদ্দিকী সভাপতিত্ব করছিলেন।
শাহজাহান ভাই কখনো এটা স্বীকার করেন নাই। আমার জাসদের বন্ধুরা সবসময় বলে এসেছেন পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম রব, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাহাজাহান সিরাজ। ভাবখানা এমন ছিল- যেন শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করলো আর অমনি আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করে দিলাম!
আজকে ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্যকে তারা স্বীকার করছেন, এজন্য আমি আ স ম রবকে ধন্যবাদ জানাই। আমার নেতা তিনি। ৫২ বছর পরে হলেও তিনি সত্যকে স্বীকার করেছেন। পতাকা উত্তোলন ওনার একার কৃতিত্ব নয়, এটা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কৃতিত্ব। সেদিন (৩ মার্চ) যে ইশতেহার পাঠ করা হয়েছিল, সে ইশতেহার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ইশতেহার ছিলো। আমরা যেমন বলে থাকি- জিয়া বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেছেন, শাহজাহান ভাই তেমনি একজন ইশতেহার পাঠকারী বা পাঠকমাত্র। এটা হলো সত্য। এই সত্যকে পাশ কাটানোর কোনো উপায় নাই।
কেমন ছিল সেই পল্টন ময়দানের অবস্থা? যেমন ছিল ৭ মার্চের অবস্থা। ৭ মার্চের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না সেদিনকার সমাবেশ। বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে বলা হয়েছে, ‘আপনি হলেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, আপনি হলেন জাতির পিতা, আপনার প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- তাঁর লেখা আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি-এর প্রথম ১০ চরণ হবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত।’
এই বাংলাদেশের পতাকা, এখন যেটি দেখছেন- বাংলাদেশের পতাকা আমরা যেটি উড়িয়ে ছিলাম সেটি কিন্তু এটি নয়। ঐ পতাকাটি ছিল লাল রক্তের ভেতরে পূর্ব বাংলার বা আজকের বাংলাদেশের মানচিত্র। সোনালি রঙের মানচিত্র ছিল। যেহেতু কোনো দেশের জাতীয় পতাকায় মানচিত্র থাকে না, সেজন্য বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে তাঁর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেটিকে উঠিয়ে দিয়ে সবুজের ভিতরে লাল বৃত্ত রেখে নতুন পতাকা করেছিলেন।
আমরা কেন পতাকায় মানচিত্র রেখেছিলাম জানেন? সুচিন্তিতভাবেই আমরা মানচিত্রটি এঁকেছিলাম। এই মানচিত্র দিয়ে আমরা অন্যদেরকে বুঝিয়ে ছিলাম- এই মানচিত্রের ভিতরে যে বাঙালিরা বসবাস করে তাদের জন্য স্বাধীনতা চাই আমরা। এর বাহিরের বাঙালিদের জন্য আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। যাতে করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা, ত্রিপুরার বাঙালিরা, আসামের বাঙালিরা আমাদের ভুল বুঝতে না পারেন। বিশেষ করে আমাদের দুর্দিনের পরমতম বন্ধু, প্রজাতন্ত্রী ভারতের মানুষ যাতে আমাদের ভুল বুঝতে না পারেন, সেজন্যই পতাকার ভেতরে মানচিত্র এঁকে দেওয়া হয়েছিল। ঐখানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, আমার যা কিছু বলার আছে, সব আমি ৭ তারিখে বলব। তিনি ৭ তারিখে সবকিছু বলেছিলেন। কী বলেছিলেন তিনি? ৭ তারিখে তিনি যা বলেছিলেন তার অফিসিয়াল ঘোষণা হয়েছে ২৬ মার্চের প্রত্যুষে। তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধু একজন বাস্তববাদী নেতা ছিলেন। তিনি জানতেন, তিনি যদি ঐখানে দাঁড়িয়ে আয়ান স্মিথের মতো ইউনিলিটারেল ডিকলারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স ঘোষণা দেন,তাহলে ঐখানে শুধু তিনি নন, যে লক্ষ লক্ষ জনতা সমবেত হয়েছেন, তাদেরকে লক্ষ্য করে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হবে এবং এই বোমাবর্ষণের মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হবে। তাকে নিঃশেষ করে দেওয়া হবে।
তিনি কী বক্তব্য দিবেন, সেই ব্যাপারে অনেকে অনেক ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার মনে যা চায়, তাই তুমি বলবা। তবে মনে রাখবা, বাংলার মানুষ স্বাধীনতা চায়। মনে রাখবা, স্বাধীনতা ভিন্ন মানুষ আর কিছু চায় না। এইটা মনে রেখে, তুমি তোমার কথা বলবা। মানুষ যাতে তোমাকে বিশ্বাসঘাতক মনে না করে।’
বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীর অহংকার ছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের আশৈশব যে রাজনীতি করেছেন, সে রাজনীতি ছিল গণতান্ত্রিক রাজনীতি, সে রাজনীতি ছিল পার্লামেন্টারি রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে সশস্ত্রতার কোনো স্থান ছিল না, তবে সশস্ত্রতা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল। কী জ্ঞান ছিল? ভিয়েতনাম যুদ্ধ তাঁর জ্ঞান। আলজেরিয়ার মুক্তির সংগ্রাম তাঁর জ্ঞান। এজন্যই বলেছিলেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। শত্রু কে? সকলেই জানে শত্রু কে। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখনো আমি হইনি। আমি তখন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং একজন ছাত্রকর্মী। সেই মাঠে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সৌভাগ্য আমার, আমি ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছি। বঙ্গবন্ধু সেদিন যেভাবে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণের বর্ণনা দেওয়ার মতো দক্ষতা আমার নেই। এটি এক অন্যরকমের অনুভূতি, অন্যরকমের অনুধাবন। এটা মাঠে উপস্থিত না থাকলে কিছুতে বুঝা সম্ভব নয়। তখনকার বাংলাদেশের যে মানুষ, তাদের মন-মানসিকতা, তাদের চিন্তা-চেতনা বর্তমান সময়ে বুঝা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আপনারা জানেন, ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল ডেকেছিলেন। রেলগাড়ী চলবে না, ট্যাক্স দিব না, এটা করব না, ঐটা করব না, সব হয়েছে। হয় নাই কী জানেন? পরবর্তী যে ৯ মাস আমরা যুদ্ধ করেছি, সেসময় চুরি, ডাকাতি, হারমাদি তথা অপরাধমূলক যে কাজগুলো আছে একটাও বাংলাদেশে ছিল না। আমি নির্দিষ্ট করে একটি কথা বলতে চাই- আমি এবং আমার বন্ধুরা যারা মুজিব বাহিনীর একটি টিমে ছিলাম। আমি সেই টিমের টিম লিডার ছিলাম। একদিন সন্ধ্যার সময় আমরা একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম, রাতে তখনও ঘুমায়নি আমরা। শুনতে পাচ্ছি, বাইরে লোকেরা কথা বলছে। আমরা জানতাম না বাড়িটা কাদের! শুনছি তারা ডাকাতিতে যাবে! তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো ডাকাতি তারা আর করবে না। তারা ডাকাতি করেনি এবং চিরদিনের জন্য ডাকাতি ছেড়ে দিয়েছিলো। এই হলো স্বাধীনতার আন্দোলন। এই হলো বঙ্গবন্ধুর আহ্বান। ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলেছিল মানুষ।
‘তাদেরকে ভাতে মারব, তাদেরকে পানিতে মারব।’ আমি তো অবাক হই যে, একজন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা গেরিলা যুদ্ধের কলাকৌশল কোথা থেকে শিখলেন? আমি আমার লেখায়ও এটা বিশ্লেষণ করেছি অনেকবার। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে যিনি রাজনীতি শিখেছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী নিজের কল্পনায়ও কখনো সশস্ত্রতার কথা ভাবতে পারেননি। সেই সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য শেখ মুজিবুর রহমান কিনা মানুষকে বলছেন, ‘তোমার যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো।’ কত বড় স্ট্র্যাটেজিক ছিলেন তিনি।
অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন। বঙ্গবন্ধু অন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেননি কেন? আমি এইটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। বঙ্গবন্ধু কী পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন? না। তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। আত্মসমর্পণের যে সংজ্ঞা অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে আছে, ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে আছে সেগুলো পড়ে দেখতে পারেন। সারেন্ডারের অর্থ একটাই, আমি যে অবস্থানের ওপর আছি সেই অবস্থান থেকে সরে যাওয়া। বঙ্গবন্ধু এই কাজটি কখনো করেননি। তিনি যে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন ৭ তারিখে ইনফরমালি এবং ২৬ তারিখ প্রত্যুষে ফরমালি, সেটি থেকে কখনো সরে জাননি। যদি সরে যেতেন তাহলে তো সহজ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে করাচিতে নিয়ে যাওয়ার ৭ দিনের মধ্যেই রাজনীতির অবস্থা অন্যরকম হতে পারতো। মুক্তিসংগ্রামীদের খুঁজে পাওয়া যেতো না। বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গ্রুপ হয়ে তারা হয়তো কাজ করতো। সেটা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু অন্যত্র যাননি কেন? তার অনেক রকমের ব্যাখ্যা আজকাল দেওয়া হয়। আমার মনে হয়েছে, দু’টো কারণে তিনি যাননি। তাঁর যে অবস্থান ছিল সেখান থেকে সরে যাওয়া খুব কঠিন ছিল। রাস্তায় তাঁকে হত্যা করা হতে পারতো। তাঁর বাড়ির চারদিকে পাকিস্তানিরা নজর রাখছিলো। পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করে বলতে পারতো যে বিদ্রোহী বাঙালিরা তাঁকে হত্যা করেছে। সমস্ত দায়দায়িত্ব বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। আরেকটি যে সম্ভাবনা আমি জানি, সেটি এখানে উপস্থাপন করব না।
বঙ্গবন্ধু সহযোগিতা নিয়েছেন, কিন্তু কারও কাছে মাথানত করতে চাননি। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক। আচ্ছা আপনারাই বলেন তো- আপনার বাড়ির দরজা আপনি কী আপনি কী আপনার পড়শীর জন্য খুলে রাখবেন, যে অস্ত্র নিয়ে আপনার বাড়িতে ঢুকবে। অথচ ইন্দিরা গান্ধীর সকল বর্ডার খুলে দেওয়া ছিল। যেই পাকিস্তানিরা ভারতের শত্রু, সেই পাকিস্তানিরা অস্ত্র নিয়ে ভারতে ঢুকেছে! এটা কী কল্পনা করতে পারেন? আজকের দিনে এটা চিন্তায় আনা যায়? যে আমার শত্রু, সে অস্ত্র নিয়ে আমার ঘরে ঢুকছে! পাকিস্তান তো শত্রু রাষ্ট্র ছিল। যারা ভারতে গিয়েছিল তাদের তখনকার পরিচয়ও পাকিস্তানি! অনেকে বলে থাকেন সবকিছু অকষ্মাৎ ঘটে গেছে। অকষ্মাৎ নয়, পরিকল্পনা ছিল। এখন অনেকের গবেষণাই এগুলো বেরিয়ে আসছে।
বঙ্গবন্ধু বিরোরী একজন গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদের লেখায়ও দেখলাম, তাজউদ্দীন আহমদকে দিয়ে বঙ্গবন্ধু ভারতীয় হাইকমিশনকে বলে রেখেছিলেন- যাতে বর্ডার খুলে দেওয়া হয় এবং ছোটোখাটো অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে যেন সাহায্য করা হয়। বৃহদাকারে অস্ত্রসস্ত্র ও সহায়তা ট্রেইনিং এগুলো শুরু হওয়ার আগে এভাবেই আমাদেরকে ভারতীয়রা গ্রহণ করে নিয়েছিলো। আমাদের বরণ করে নেওয়ার কোনো কারণ নাই। তারপরেও করেছিলেন মহীয়সী নারী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুর পাশে তাঁকেও আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
লেখক: মন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; সংসদ সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পঁচাত্তর পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা।