চাপের মুখে এরদোগানের দল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

A girl in a wheelchair is raised in the air to watch Turkish President Tayyip Erdogan during an election rally in Istanbul, Turkey June 22, 2018. REUTERS/Alkis Konstantinidis

তুরস্কে গত জুন মাসের সংসদীয় এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাত্র ৫ মাসের মাথায়ই নতুন করে বইতে শুরু করছে নির্বাচনী হাওয়া।

আগামী মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন।

এ নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। চলছে নির্বাচনী ঐক্য প্রক্রিয়া।

প্রসঙ্গত, গত বছর জুনের নির্বাচনে রেকর্ড সংখক শতকরা ৫২ ভাগ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্ষমতাসীন ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন দল (আক পার্টি) প্রধান রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান।

তখন সংসদীয় নির্বাচনে এরদোগানের দল শতকরা ৪২ ভাগ ভোট পেয়ে সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও ১৫ বছর ধরে যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল তা হাতছাড়া করে।

ওই নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়েছিল যে, এরদোগানের সমর্থন বাড়লেও তার দলের প্রতি মানুষের সমর্থন কমছে।

নির্বাচনের পরে তিনি তার দলবিমুখ ভোটারদের আবার দলের দিকে টানতে অনেক পদক্ষেপ নেন। বিতর্কিত মেয়রদেরকে সরিয়ে দেন, অনেককে জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। সরকারের বিতর্কিত কিছু প্রকল্প থেকে সরে এসে পরিবেশবান্ধব অনেক কাজে হাত দেন। তখন সমর্থন কিছুটা বাড়ছিল বৈকি।
কিন্তু বাঁধ সাধে আগস্টের মুদ্রার মূল্য পতন যা দেশটিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো কঠিন এক অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি। এরদোগানের গত ১৬ বছরের শাসনামলে এবারই সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে পড়ে দেশ। তবে এই সঙ্কট যতটা দীর্ঘায়িত আর যতটা খারাপ হবে বলে সবাই ধারণা করছিলো তার চেয়ে দ্রুত কাটিয়ে উঠছে। কিন্তু এই মুদ্রার দরপতন তুরস্কের অর্থনীতিকে যে ধাক্কা দিয়েছে তার প্রভাব হয়তো আরো ২-৩ বছর চলবে।

কিছু কিছু দ্রব্যমূলের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে এসেছে। নতুন বছরের শুরুতে হয়তো আরো বাড়বে।

এরদোগানের সাম্প্রতিক বিবৃতি আর রাজনৈতিক পদক্ষেপই স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে স্থানীয় নির্বাচনের আগে তার ক্ষমতাসীন দল ভীষণ চাপের মধ্যে আছে। এবং তিনি নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছু কিছু এলাকায় জোটবদ্ধ হয়ে লড়বেন।

কট্টর জাতীয়তাবাদী পার্টি এমএইচপি-এর সাথে এরদোগানের আক পার্টির ঐক্যের বিষয়টা অক্টোবরের শেষ দিকে জনসম্মুখে চলে আসে।

তখন কিন্তু এরদোগান ঐক্যের বিষয়টিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। ২৩ অক্টোবর এক বক্তৃতায় তিনি এমএইচপি লিডার ডেভলেত বাহচেলির প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যে যার পথে চলবে। আমরা স্থানীয় ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সব আসনে নিজেদের প্রাথী নিয়েই নির্বাচন করবো। কোনো ঐক্যে যাবোনা।

এই বক্তব্যের পরে দলের মধ্যে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছিল আগামী নির্বাচন নিয়ে। এই মাসের শুরুর দিকে তফসিল ঘোষণার পর নোমিনেশন ফর্ম বিক্রি শুরু হয় কিন্তু আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় নমিনেশন ফর্ম জমা দেয়ার তারিখ এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেয়া হয়। তারপরও তুরস্কের সর্ব বৃহৎ দলটি যোগ্য প্রাথী খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে।

আর তার এই বক্তব্যের পর প্রধান বিরোধী দল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সিএইচপি সংসদের আসন সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় ও পঞ্চম দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে।

ভোটার সমীকরণ এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ক্ষমতাসীন পার্টির দুর্গ বলে পরিচিত ইস্তানবুল, আঙ্কারা এবং কোনিয়া সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদগুলো হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

তাইতো এরদোগান গত সপ্তাহে ঘটা করেই ঘোষণা দিলেন যে তিনি এমএইচপি পার্টির লিডারের সাথে ঐক্যের ব্যাপারে আলোচনায় বসবেন।

আলোচনায় উভয় দল বড় শহরগুলোর মেয়রের নির্বাচনের ক্ষেত্রে একে অপরকে সমর্থন দিবে এবং এক দল মেয়র প্রাথী দিলে অন্য দল সেই শহরে প্রাথী না দিয়ে বরং ওই প্রাথীকে সমর্থন দিবে বলে একমত পোষণ করে।

এমএইচপি ইস্তানবুল, আঙ্কারা এবং ইজমির শহরে কোনো মেয়র প্রার্থী দিবেনা বরং আক পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দিবে।

এরদোগান গত কয়েকদিন ধরে তার দলের প্রাথীদের নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ইস্তানবুলের জন্য কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেননি। যতটুকু জানা গেছে তাতে স্পষ্টই ধারণা করা যায় তিনি ইস্তানবুলের মেয়র প্রাথী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান পার্লামেন্ট স্পিকার বিনালি ইলদিরিম-কে নমিনেশন দিবেন। অন্য বড় শহর গুলোতেও এ ধরণের হ্যাভিওয়েট প্রার্থী না দিলে তার দল স্মরণকালের ভয়াবহ ভরাডুবুরি মুখোমুখি হতে পারে।

ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দল রাজধানী শহর আঙ্কারার মেয়র প্রাথী হিসেবে সাবেক নগরায়ন মন্ত্রী মেহমেত ওজহাসেকি আর বিরোধীদলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় ইজমির শহরে সাবেক অর্থমন্ত্রী নিহত জেইবেকচি-এর নাম ঘোষণা করেছে।

এরদোগান সব নির্বাচনের আগেই অনেক পরীক্ষা, নিরীক্ষা এবং সমীক্ষা চালান আর সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন। প্রাথী নির্বাচন, নির্বাচনী ইশতিহার প্রণয়ন, নির্বাচনী স্লোগান এবং নির্বাচনী গান সহ সবকিছু নিয়ে এমনভাবে ভোট নামেন যেন নির্বাচনের আগেই তার সমর্থকদের মধ্যে একটা পজিটিভ আমেজ তৈরী করেন। আর বিরোধীদের মধ্যে হারার ভয় তৈরী করেন। তিনি এতই বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ এবং দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালক যে গত ১৬ বছরে ১৪ বার নির্বাচন করে প্রতিবারই দলকে বিজয়ী করেছেন।

তবে জনগণের ভোটে তুরস্কের বর্তমান এই অৰ্থনৈতিক সমস্যার কতটা প্রতিফলন হয় তা দেখতে মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে