এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমরা এখনো তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে ভারতের একটি টিম এখানে (বাংলাদেশে) আসবে। প্রয়োজনে আমাদের একটি টিমও সেখানে (ভারত) যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় সব কিছু চিহ্নিত হয়েছে। কারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। এখন শুধু ঘোষণার বাকি।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা মরদেহটা এখনো উদ্ধার করতে পারিনি। আপনারা যা শুনেছেন, আমরাও সেগুলোই শুনেছি। যে পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার করতে না পারব, সে পর্যন্ত অফিসিয়ালি আপনাদের কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।’
পুলিশের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারসন সংশ্লিষ্টরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের কেউ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কি না এমন তথ্য আপাতত নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আনোয়ারুল আজীম আমাদের ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের এমপি। ওই বর্ডার এলাকাটা সন্ত্রাস-কবলিত। সে এলাকারই তিনি এমপি। কী কারণে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সে বিষয়ে সুনিশ্চিত না হয়ে কিছুই বলা ঠিক হবে না। আমরা আগে নিশ্চিত হই, তারপর আপনাদের বিস্তারিত জানাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। আশা করছি, খুব অল্প সময়ে আমরা আপনাদের কিছু জানাতে পারব।’
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। কলকাতায় বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এদিকে বাংলাদেশেও তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করে। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুসন্ধানে নামে। পরে বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
এ বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার বিকালে নিউ টাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ঘুরে দেখে কলকাতার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যা তথ্য আছে তাতে এমপি আনোয়ারুলকে সর্বশেষ ১৩ মে এখানে ঢুকতে দেখা গেছে। এর আগে তিনি এখানে এসেছিলেন কি না সেটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে তার লাশ উদ্ধার করা যায়নি।’
লাশ উদ্ধার না করে কীভাবে তাকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন জানতে চাইলে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘আমাদের কাছে ইনপুট আছে।’
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনারকে খুন করা হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দ্বীপ রায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।’
তবে আখতারুজ্জামান এখনো ধরা পড়েননি। ভারত থেকে নেপাল হয়ে এরইমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে খবর পেয়েছে ঢাকার পুলিশ।
বাংলাদেশে এ বিষয়ে তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এই আখতারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে। এলাকায় তিনি শাহীন মিয়া নামে পরিচিত। তার ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান।
কলকাতার পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমগুলো লিখেছে, ১৩ মে নিউ টাউনের ওই বাসায় শ্বাসরোধে খুন করা হয় আনারকে। পরে টুকরো টুকরো করে কাটা হয় দেহ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিন দিন ধরে দেহের অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সেগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আনন্দবাজার লিখেছে, সঞ্জীভা গার্ডেনসের সিসি ক্যামেরার ভিডিও খতিয়ে দেখার পর তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বরাহনগর থেকে একটি গাড়িতে চেপে নিউ টাউনের ওই বাড়িতে আবাসনে পৌঁছান আনার। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি সেই গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এছাড়া একটি রাইড শেয়ারের গাড়িও দেখা গেছে সিসি ক্যামেরায়, যে গাড়িতে করে সন্দেহজনক কয়েকজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেই গাড়ির চালককেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে খবর দিয়েছে আনন্দবাজার।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় তার মেয়ে ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। একইসঙ্গে কলকাতায়ও পৃথক একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। কলকাতার পুলিশ লাশের টুকরো বহনকারী এক প্রাইভেটকারের চালককে আটক করেছে।