ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কক্সবাজার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটাসহ অন্তত ২১টি গ্রাম। এসব গ্রামের হাজারো মানুষ গৃহপালিত প্রাণী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কাপড়চোপড় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে শহরের দিকে ছুটছে। উপকূলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য শহরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক হল ও কিছু হোটেল খুলে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি, সারাদিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইতে থাকে। সকাল থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এলাকায় প্রচারণা চালানো হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। তবে বিকেল চারটার পর থেকে উপকূলের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্দেশে বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটে চলা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে কক্সবাজার উপকূলকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ ১২ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের ওঠানামা সারাদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
বিকেলে পৌরসভার নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। তারা উপকূলের বাসিন্দাদের দ্রুত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে অনুরোধ জানান।
নাজিরারটেক উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের মহাল রয়েছে প্রায় ৭০০টি। জোয়ারের পানিতে ইতিমধ্যে ৩০০টির বেশি মহাল পানিতে ডুবে গেছে। বাসিন্যাপাড়া, মোস্তাইক্যাপাড়া, বন্দরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, খুদিয়ারটেক পাড়া, সমিতিপাড়ার শত শত ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এসব ঘরবাড়ির লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সাগরে জোয়ার শুরু হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। নাজিরারটেক উপকূলসহ জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই সব এলাকার মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভাসহ জেলার ৯টি উপজেলায় অন্তত দুই লাখ মানুষ বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আরও তিন লাখ মানুষকে সরিয়ে আনার কাজ চলছে। এ জন্য ৬৩৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও শতাধিক বহুতল ভবনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনো খাবার, খাওয়ার পানি, ওষুধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১০ হাজার ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবী মাঠে তৎপর রয়েছেন।