গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছ শুধু প্রকৃতির শোভাই বাড়ায় না, মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড় তুফানের হাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও গাছের ভূমিকা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। গাছ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। কাজেই মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বনায়নের বিকল্প নেই। আমাদের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনায়নের আওতায় আনতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
আজ সোমবার (৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে দেশব্যাপী আজকের এই বৃক্ষ আন্দোলন ও বৃক্ষ সচেতনতার মূল প্রবক্তা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মূলত তিনিই সারাদেশে বৃক্ষরোপণকে আনুষ্ঠানিকতা দেন। মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস শুধু জীবন ও সম্পদেরই নষ্ট হয়নি, দেশের বৃক্ষ ও বনাঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা থেকে উত্তরণে দেশকে বৃক্ষ সম্পদে আরো সমৃদ্ধ করতে জাতির পিতা বৃক্ষরোপণ অভিযান চালু করেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হচ্ছে, গাছ লাগানোকে সামাজিক আন্দোলনে রুপান্তর করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে অনেক গাছ লাগানো হয়েছে, তবে এক্ষেত্রে ঘাটতিও রয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দপ্তর-সংস্থার মালিকানা/নিয়ন্ত্রণে যেসব জমি রয়েছে, তার খালি অংশে বৃক্ষরোপণ করা হবে। আগামী এক বছরে আমরা পাঁচ লক্ষ গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্যরা যারা উপস্থিত আছেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, অতীতে অভিযোগ আছে, রাজউক বনায়ন নষ্ট করে ঘরবাড়ি তৈরির জন্য প্লট বরাদ্দ দিয়েছে এবং ইমারত নির্মাণের জন্য নকশার অনুমোদন দিয়েছে। বাড়ি করার জন্য রাজউক যে সকল শর্তের ভিত্তিতে নকশা অনুমোদন দেয়, সেখানে একটি শর্ত যুক্ত করতে বলেছি- তারা যেন বাড়ির অবশিষ্ট জায়গায় গাছ লাগায়, অন্তত ফুলের বাগান হলেও যেন করে। তাতেও বনায়নের কিছুটা কাজ হবে।
মোকতাদির চৌধুরী আরো বলেন, বাংলাদেশে বৃক্ষরোপনের উপযুক্ত সময় মনে করা হয় বর্ষাকালকে অর্থাৎ জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস গাছের চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে আজকের এই বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ, এজন্য আমি রাজউকসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি যখন ঢাকায় প্রথম আসি, তখন ঢাকার রাস্তাসমূহের দুই পাশ শতবর্ষী গাছে বেষ্টিত ছিল। কিন্তু ঐসব গাছে বসে স্নাইপারের মাধ্যমে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হতে পারে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সকল শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দেন।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, পূর্বাচলে বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে অন্তত ২০ শতাংশে যেন গাছ লাগানো হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে, ফলদ, বনজ এবং ঔষধি- যেকোনো ধরনের গাছ হতে পারে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব নবীরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ খুবই নগণ্য। আমাদের সবার উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপনে অংশ নেয়া। বনাঞ্চলের এই ঘাটতি পূরণে দেশের আনাচে-কানাচে, ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী উঁচু-নিচু জমি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ির আশেপাশের খালি জায়গা, বাড়ির ছাদ, রাস্তা, রেল লাইন ও খাদের আশপাশে, চরাঞ্চল এবং পার্বত্য এলাকায় বৃক্ষরোপণ করে দেশের বনজ সম্পদের চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে।
সচিব বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণসহ প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ টেকসই পরিবেশ সংরক্ষণ, কার্বন আঁধার সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৃক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে যে বৃক্ষরোপণ করা হলো তা সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণ সচেষ্ট থাকবেন।
রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ড. সিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপনের উপকারিতা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিমুলক বৃক্ষরোপণ প্রচার অভিযান বরাবরই একটি কার্যকর উদ্যোগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বৃক্ষপ্রেমী। তিনি সবসময়ই বৃক্ষরোপ ও বৃক্ষের যত্নের প্রতি সজাগ থাকতেন। সবাইকে তিনি উৎসাহ দিতেন। বলা হয়ে থাকে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামের একটি অংশ ছিলো বৃক্ষরোপণ। তিনি বলেন, আজকে যে বৃক্ষরোপন শুরু হলো, বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণে এমন কার্যক্রম চলমান থাকবে এমনটাই আশা করছি।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, হাউসিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সরকারি আবাসন পরিদপ্তর, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা পরিদপ্তর ও ব্রাকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।