প্রসঙ্গ: গুম তদন্তে কমিশন

সারোয়ার আলম

প্রতীকী ছবিটি ইন্টারনেট সূত্রে সংগৃহীত

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনাগুলো তদন্তে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছে ছাত্রজনতার তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত প্রথম ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- গুম, খুন, অপহরণ এবং ‘আয়নাঘরে’র মতো চরম ঘৃণ্য অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।”

এই প্রেক্ষাপটে (২৭ আগস্ট) গুমের ঘটনার তদন্তে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কমিশনের কার্যপরিধিতে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন্ পরিস্থিতিতে গুম হয়েছেন তারা, তা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিশনকে তদন্ত সাপেক্ষে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে যে, জোরপূর্বক গুম হওয়া ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়াসহ এ সম্পর্কে সুপারিশ করবে কমিশন। এছাড়া গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়স্বজনকে জানানো এবং গুম হওয়াসহ ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তদন্ত করে থাকলে, সেগুলোরও তথ্য সংগ্রহ করবে এই কমিশন।

উল্লেখ্য যে, বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাক। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত ১৮ আগস্ট বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ১৫৮ ব্যক্তির একটি তালিকা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের কাছে জমা দিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকা দিয়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, তৎকালীন সরকার তদন্তের আশ্বাস দিলেও একটা ঘটনারও তদন্ত করেনি, স্বীকার করা তো দূরের কথা।

স্বাধীন সংবাদপত্রসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য প্রণীত হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এর পাশাপাশি টেলিফোনে আড়িপাতা, ব্যক্তির অধিকার খর্ব করাসহ গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে পদে পদে। এসবই চলেছে তথাকথিত গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে। আমাদের প্রত্যাশা, ন্যায় বিচার এবং সত্যিকারের মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশন সকল অপকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন তৈরি করবে, যাতে করে কোনো অপরাধী প্রাপ্য শাস্তি থেকে বেঁচে যেতে না পারে।

শেয়ার করুন