আপনাকে বলছি—মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার

আলমগীর এ. রউফ চৌধুরী

সম্পাদকীয়

আপনাকে বলছি—মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার। জনার, আপনি এবং আপনার মাধ্যমে সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর সকলকে সালাম, আদাব রইল। মিডিয়া মাধ্যমে যে সংবাদাদি পাই তাতে মনে হয় সকলেই ভাল আছেন। আপনারা ভাল থাকবেন এবং থাকেন এমনটাই আমারও চাওয়া। যদিও দেশবাসীর পক্ষে কথা বলার অধিকার আমার ও আমাদের রয়েছে, তবুও পরিস্থিতি জনিত অবস্থার কারণে তা বলার মতো পরিবেশ নেই বলেই মনে হয়। কেননা ক্ষমতায় এখন কারা আছেন তা বুঝতে পারছি না।

ক. ক্ষমতার হস্তান্তরের শুরুতেই আমাদের সেনাপ্রধান সকল কিছু আইনানুগভাবে চলছে এমন একটা আশ্বাস দেশবাসীকে দিয়েছিলেন ৫ আগস্ট ২০২৪ এ।

খ. তিনদিন পর ৮ আগস্ট ২০২৪ আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার (সেনাবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট হয়ে) ক্ষমতা গ্রহণ করে।

গ. সরকারের সমর্থনে সুপ্রীম কোর্টের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়া যায় সরকারের উপদেষ্টাগনের শপথ গ্রহণের পরদিন;

ঘ. ক্ষমতার পরিবর্তনের পর মনে হচ্ছিল যেন বিএনপি (বাজা দল), জামায়াতে- ইসলামী (তখনও বৈধ দল হিসেবে স্বীকৃতি হয়নি), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আশ্রয় পুষ্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত তথাকথিত অরাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলাম, নূরের গণ-অধিকার পরিষদ (এ দলের প্রধান নূর সাহেব সাবেক সরকারের প্রতিমন্ত্রী বিপুর কার্যালয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর রেইডের সময় সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূতভাবে উপস্থিত ছিলেন, সেই সাথে একজন উপদেষ্টাও, যা তিনি আইনত ক্ষমতাপ্রাপ্ত নন), তারাও এমন একদল, যারা কার্যতঃ ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার-এরা সবাই ক্ষমতাসীন হয়েছেন (জনগণের আস্থা অর্জন ব্যতীত ক্ষমতার্জনের এর চেয়ে মোক্ষম সুযোগ আর কি ই বা হতে পারে)।

ঙ. বিএনপি-এর অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস সকলেরই জানা আছে। অথচ একের পর তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলি যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া ব্যতীত রাতারাতি বাতিল হতে থাকে, খারিজ হতে থাকে,
অথচ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেনাবাহিনী ও আপনারা ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন এবং দেশবাসীর একটি বড় অংশ (যারা ক্ষমতার ক্ষেত্রে matter করে) আপনাদের সমর্থন দিয়েছিলেন;

চ. পুলিশ তার পূর্ব চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ করে স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক টাউট চক্রের সহায়তায় যাচাই বাছাই ছাড়াই আওয়ামী লীগ, ক্ষেত্র বিশেষে ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীগণের বিরুদ্ধে (এমনকি এমন সব নারী পুরুষকেও আসামি করা হয় যারা আদৌ রাজনীতি বা অন্যকোনোরূপ এমন কোনো কর্মে যুক্ত নন, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকারক, অপরাধ তো দূরের কথা) এলোপাথারী হয়রানিমূলক ও মামলা বাণিজ্যে সুবিধাজনক মোকাদ্দমা সাজিয়ে নিচ্ছে এবং গ্রেপ্তার ভৌতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই সব মামলার পেছনে কাজ করছেন দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ কর্মকর্তা, বিএনপি-এর চাঁদাবাজ ও লুটেরা টাইপের নেতাকর্মী (লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, এই দলটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘাতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে), কোথাও কোথাও হেফাজত ইসলাম নাম্মীয় একই পথভ্রষ্ট দল (ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষেত্রে) এই সব অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে।
আইনগতভাবে এই গুলি বিচার বিশ্লেষণ ব্যতীত মামলা হিসেবে গ্রহণ করার কথা নয়। কিন্তু মামলা বাণিজ্য বলে কথা। মিথ্যা, বানোয়াট, অতিরঞ্জন, একজনের অপরাধ অন্যের ঘারে চাপিয়ে দেয়া ইত্যাকার অপরাধমূলক মামলা দায়ের দেশব্যাপী একটি মারাত্মক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে;

ছ. যে আন্দোলনের পথ ধরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, সে আন্দোলন ছিল একটি জবরদস্তিমূলক সরকারের বিরুদ্ধে। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধ নয় (এটাই সাধারণ মানুষের ধারণা); দলের সাধারণ কর্মীগণ এবং অনেক নেতৃস্থানীয়গণই কোনো অপরাধমূলক কাজের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন না (আপনাদের বক্তব্যানুসারেই তো ভিন্নমত প্রকাশ করা গণতান্ত্রিক) সুতরাং জবরদস্তি না থাকলে ভিন্নমত প্রকাশ করা কোনো অপরাধ হতে পারে না। সংবিধান সম্মত- যা এখনও বহাল আছে- কোনো আদর্শের প্রচার কোনো অপরাধ হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলা, সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন অর্থনীতির পক্ষে কথা বলা, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলা কোনো অপরাধ পারে না। তাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ কোনোভাবেই রাষ্ট্রের, সরকারের ও সমাজের গণতান্ত্রয়নের পক্ষে যাবে না। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি;

জ. সংস্কার করা খুবই দরকার। সেই সংস্কার আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত কার্যকর হবে, এমনটা মনে করা ঠিক হবে না।

এমতাবস্থায় আমরা মনে করি যে—

১. রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৪ দলকে সংস্কার আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া দরকার;

২. রাষ্ট্রের সংস্কারের আগে নিজেদের দলীয় সংস্কারে মনোযোগী হতে বিএনপি এবং অন্যান্য দলকে পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন।

৩. পুলিশী কায়দায় হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করে নেওয়া দরকার এবং প্রাথমিকভাবে মামলাগুলির যথার্থতা না থাকলে, তথাকথিত অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেপ্তার করা উচিৎ হবে না;

৪. সংস্কার আলোচনায় ১৪ দলকে আহ্বান জানাতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে আপনার প্রতি এবং আপনার সহকর্মীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ রাখব।

ভাবালতা নয় বাস্তবতার নিরিখে আমাদের এই পত্রিটি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হল।

লেখক: রাষ্ট্র চিন্তক

শেয়ার করুন