সরকার পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোই সাংবিধানিক পথে যাত্রা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যদি সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল।’
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। সভায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশ কীভাবে সাংবিধানিক পথে গেল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক পথে কারা গিয়েছিল? প্রথম যে মিটিংটা ছিল, সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে আমাকে একজন ফোন করলেন। আমি তো হতবাক। আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না যে আমাকে মারার জন্য ফোন করেছে নাকি কথা বলার জন্য। আমার ওয়াইফ (স্ত্রী) হু হু করে কান্না শুরু করল। আমাকে বলল যে তুমি যেয়ো না, তোমাকে মেরে ফেলবে। তারপর গেলাম যখন, দেখি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল সেখানে, কেবল আওয়ামী লীগ আর তার দোসররা ছাড়া। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত, গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিটি দল, জাতীয় পার্টির তিনটি অংশ—সবাই ছিল। ওনারা সবাই মিলে সাংবিধানিক পথে যাত্রা শুরু করেছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘তারপর যখন বঙ্গবভনে আলোচনায় বসলাম, এত বড় টেবিল, যার কোনায় বসে ছিলাম আমি। সবচেয়ে জোর দিয়ে একটি কথা বলেছিলাম, খালেদা জিয়াকে আজকেই ছাড়তে হবে।’
তারপর আরও আলোচনা হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই যে পুরো আলোচনা প্রক্রিয়ায় কেউ তো তখন বলেন নাই যে আমরা কেন শপথ নেব, সাংবিধানিক পথে যাব, চলেন বিপ্লবী সরকার গঠন করি?’
সাংবিধানিক পথে যাওয়া দোষের ব্যাপার নয় উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, তখন এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যে খুব সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে চিন্তা করার মতো পরিবেশ ছিল না। আর যদি সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল।
উৎকৃষ্ট গণতন্ত্র চাইলে কিছু সংস্কার করতে হবে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এখন এই যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিল, জীবন বিপন্ন হলো, অঙ্গহানি হলো, তারা কি ন্যূনতম গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে? তারা দিয়েছে উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য।
যদি অনৈক্য থাকে, তাহলে সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ভয় লাগে, সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন আন্দোলনের সাথে থাকা শক্তিদের মধ্যে কোনো প্রশ্নে অনৈক্য দেখি। মতবিরোধ থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু অনৈক্য যেন না থাকে। একসঙ্গে কথা বলে রিজলভ (সমাধান) করতে হবে। আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে সংবিধানের মধ্যে থেকেও সমাধান সম্ভব, সংবিধানের বাইরে গিয়েও সমাধান সম্ভব। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের ঐক্য।’