বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হওয়ার পরে দেশে নতুন করে বৈষম্য শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলছেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ আন্দোলনে ছাত্রদের নিহতের মামলায় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন জিএম কাদের।
তিনি বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে রংপুরে ১১টি মিথ্যা মামলায় জাপার অন্তত ৩৩ জন নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। তাদের অনেকেই জেল খেটেছেন, রংপুরে দুইজন নেতা শহীদ হয়েছেন, রাজধানীতেও পার্টি সক্রিয় অংশ নিয়েছে। জাপা কেন্দ্রীয়ভাবে যৌথসভা করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের ছাত্রদের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু এখন হত্যা মামলায় পার্টির নেতাদের আসামি করা হচ্ছে, এই অন্যায় আমরা মানব না, আমরা এর প্রতিবাদ করব।
তুমুল গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে সহযোগী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা কখনও মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন। কখনও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছে।
দলটি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটে যোগ দেয়। ২০১৪ থেকে তিনটি নির্বাচনে জোট অথবা সমঝোতা করেই অংশ নেয়, টানা তিনটি সংসদে তারা ছিল বিরোধী দল।
সরকার পতনের পর আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে করা মামলাগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরিফা কাদেরসহ জাপার নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে জাতীয় পার্টি।
আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকার কথা জানিয়ে জিএম কাদের বলে আসছেন, তার দলের কর্মীরাও জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন। আন্দোলনে তাদেরও ভূমিকা ছিল। তিনি নিজে রংপুরে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন, তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টিও ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার সংলাপেও জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর বিরোধিতা করতে থাকলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রথম দফায় সংলাপে গেলেও পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংস্কারের সংলাপে ডাক পায়নি দলটি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেইসবুক পোস্টে জাতীয় পার্টিকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানালে প্রতিবাদ গড়ে তোলার কথাও লিখেছিলেন। আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এসব কারণে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির নেতারা। সবশেষ শনিবার তাদের দুজনের রংপুরে যাওয়ার খবরে সেখানে লাঠি মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টি।
এদিন বনানী কার্যালয়ে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করেছে। যারা আওয়ামী লীগ করবে তাদের জন্য এক ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাকি সবার জন্য ভিন্ন। জনসাধারণের জন্য এক আইন আর যারা আওয়ামী লীগ করবে তাদের জন্য আইন।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ অনেক কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন, বেড়েছে বেকারত্বের সমস্যা। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চাই, যাতে তারা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন শুধু নয়, একটি পরিবর্তিত রাষ্ট্র কাঠামো ও সংশোধিত শাসন ব্যবস্থা উপহার দিতে পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও খাওয়া-পড়ার ব্যবস্থা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর জেলা সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান পন্নি, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক খান মো. ইসরাফিল খোকন, গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মণ্ডল, গাজীপুর মহানগর আহ্বায়ক মো. শরিফুল ইসলাম, সদস্য সচিব শেখ মাসুদুল আলম টিটু, নরসিংদী জেলার সভাপতি ওমর ফারুক মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মাসুম, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সানাউল্ল্যাহ সানু, মানিকগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান সাঈদ, মুন্সিগঞ্জ জেলা সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্যাহ সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।