অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে চায় না সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, অনেকেই বলেন, সরকারকে একটু সময় দিতে হবে। কিন্তু সরকারকে সময় দেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা সরকারের যে কোনো পদক্ষেপ ভুল হলে ১৮ কোটি মানুষ সাফার করে। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য এখানে জড়িত।আবেগ দিয়ে সরকার নামানো যায়, আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সম্মেলন কক্ষে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা উঠে আসে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার শুধু কাগজে-কলমে করলে হবে না। আমাদের মনস্তত্ত্বে ও আচরণে সংস্কার করতে হবে।
সংলাপে সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস’র চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী তরুণদের অবমূল্যায়িত না করার অনুরোধ জানান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা নেতা-মন্ত্রী বা এমপি হতে আসেননি বলেও দাবি করেন তিনি।
তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে জিল্লুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্ররা আন্দোলনটা শুরু করেছে। সব শ্রেণিপেশার মানুষ এখানে ছিল। এখানে ছাত্র-জনতা সবাই ছিল। অন্তত তিনজনকে আমরা সরকারে দেখতে পারছি। তারা সবার মতামত নিয়ে আছেন কি না সেটা নিয়ে সংশয় আছে।
তিনি বলেন, আমি সামরিক সরকারকে ভয় পাইনি, শেখ হাসিনা সরকারকে ভয় পাইনি। এই সরকারকেও ভয় পাই না। দেশে থাকলে কথা বলতেই থাকবো। আমি সরকার গঠনের পরে তাদের বলেছি, ছাত্রদের এই সরকারের অংশ নেওয়াটা আমার পছন্দ হয়নি। ছাত্ররা স্টাবলিশমেন্টের বাইরে থাকলে দেশের জন্য কল্যাণকর।
তিনি আরও বলেন, বলা হয়েছিল এই আন্দোলনের একক কোনো নেতা নেই। বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়ক ৬০, ৬৫ পরে ১৫৮ জন সংখ্যা দেখলাম। তাদের কয়েকজনকে যখন ডিবি অফিসে নেওয়া হয় তখন অনেকেই বাইরে থেকে ৯ দফা, ১০ দফা দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা রেখেছে। আজ তাদের নামও আমরা শুনি না।
সিজিএসর নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, আস্থার সংকট বিগত সরকারের সময় ছিল, এখনো আছে। আস্থার সংকট কাটাতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যেটা এই আলোচনার মধ্যে আসছে।
সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খানের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এফবিসিসিআইয়ের তিন সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির হোসেন ও মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) ও সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, আবু ইউসুফ, সায়মা হক বিদিশা ও শাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ঢাকা চেম্বারের দুই সাবেক সভাপতি সবুর খান ও আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল হয়ে গেছে। খুবলিয়ে খেয়ে রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। এ রকম একটি রাষ্ট্রযন্ত্র পেয়ে তিন মাসও হয়নি সরকারের। দাবি-দাওয়া শুনলে মনে হয় কোনো জগতে বাস করছি। প্রাতিষ্ঠানিক, নির্বাচনী সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারেও মনোযোগ দিতে হবে। দেশের মধ্যে নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতা আনতে হবে। আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে না বইতে হয়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটা মুহূর্তে জবাবদিহি না থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রতিবছর ২৫-২৭ লাখ কর্মক্ষম লোক বাজারে আসে। এর মধ্যে সরকারি চাকরি করে মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি কর্মক্ষম তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন সামাজিক মূলধন, সঞ্চয়। সব সরকারই নানাভাবে সমাজকে বিভক্ত করেছে। একে অপরের শত্রুতে পরিণত করেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক না হলে কোনো সংস্কারেই কাজ হবে না।
সিজিএস চেয়ারম্যান মুনিরা খান বলেন, অর্থপাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া যখন দেশের ব্যাংকগুলোকে দুর্বল বলে তালিকাবদ্ধ করে, তখন সেখান থেকে টাকা সরিয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়ে যায়, টাকা পাচারের প্রবণতাও বাড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ট্রেড লাইসেন্সসহ সহজ নীতিমালা করতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তথ্যপ্রবাহ বাড়ানো প্রয়োজন। এলাকাভিত্তিক কর্মক্ষেত্র তৈরি করার মাধ্যমে ঢাকামুখিতা কমাতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, জিডিপি ও জনসংখ্যার যে তথ্য সে তথ্য নিয়ে কিন্তু অনেক বড় প্রশ্ন আছে। আগে আমাদের তথ্য ঠিক করতে হবে। তাহলে আমরা পরিমাপ করতে পারবো যে খাদ্যের পরিমাণ কত লাগবে। সেজন্য আমাদের তথ্যের জায়গাটা ঠিক করতে হবে।