- ৫ই আগস্টের সকালে যখন মুখে মাস্ক পরে ঘর থেকে বের হই তখন বৌ সরাসরি মানা না করলেও – মা কিছুতেই ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছিলো না। গণভবন আমার বাসার খুব কাছে হওয়ায় আমি ১২.৩০ – ১২.৪৫ এই সময়ে যে দলটা প্রথম গণভবনে ঢুকেছিল আমি সে মিছিলের সামনে-ই ছিলাম।
আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী দুঃশাসনের এবং ১৫ই জুলাই থেকে ০৪ই আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রজনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমার কাছে ঐ সময়ে সবচাইতে বড় কর্তব্য মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল ১৫ বছরের বিচার বহির্ভূত প্রতিটি হত্যার বিচার হোক, বিচার হোক আমার আপনার শ্রমে ঘামে অর্জিত টাকা যারা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের, বিচার হোক বাকস্বাধীনতা হরণের, প্রতিটি গুম, খুন, ধর্ষণ, বিচারীক হত্যাকাণ্ডের, দখল, লাঞ্ছনা গঞ্জনার, লুটতরাজ – জখমের !
কিন্তু হায় – ০৫ই আগস্ট রাতে যখন দেখলাম সারাদেশে আওয়ামী লীগের ৮-১০ হাজার নেতাকর্মীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, রাস্তাঘাটে আওয়ামী লীগ – যুবলীগ – ছাত্রলীগের লোকজন কে পিটিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে তখনি আমার মোহভঙ্গ হলো। ঘটনা কি – আমি তো চেয়েছিলাম বিচার হোক, বিচার আমি বা কেউ নিজের হাতে তুলে নিব তা তো চাই নাই!
০৮ই আগস্ট অনেক নাটক শেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিলো, সে থেকে এখন পর্যন্ত এ সরকার আইন শৃঙ্খলা ঠিক করার জন্য কোন রকমের বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা বরং ০৫ ই আগস্ট পরবর্তী যত হত্যাকাণ্ড সবগুলোর বিচার চিরতরে বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছে ! একের পর এক কুখ্যাত সন্ত্রাসী কোন জাদুবলে জামিন পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসলো এটা আমার মনে হয় যে জামিন দিয়েছে সে নিজেই জানে না। ওদের কাজকর্ম দেখে আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশের যে কোনো গ্রামের মেম্বার ও দেশ চালাতে এদের চাইতে অনেক বেশি যোগ্য।
যে কোনো দেশের বা সমাজের পরিবর্তনের জন্য স্থিতিশীল পরিস্থিতি সবচাইতে বেশি জরুরি, এরা দেশ কে স্থিতিশীল করা তো দূরের কথা এদের কাজ কারবার দেখে তো মনে হচ্ছে এরা পরিস্থিতি আরো ঘোলা করছে। যখন বাজারে বেগুনের কেজি ২০০ টাকা তখন বেগুনের দাম কমানোর চেষ্টা না করে বেগুন কিনলে আপনি কি পলেথিনে না পাটের ব্যাগে করে বাসায় নিবেন এরা ঐ চিন্তায় ব্যাস্ত! তিন মাসের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে ওদের কোন যৌক্তিক সংস্কার বা সংস্কারের উদ্যোগ আপনার চোখে পড়েছে কি না আমি জানি না তবে আমার চোখে পড়ে নি।
রাজনৈতিক দল কে নিষিদ্ধ করা, রাজনৈতিক দলের অফিসে আগুন লাগানো, গণমামলা- গ্রেপ্তার, হত্যা, জখম, লুটপাট আওয়ামী লীগ ১৫-১৬ বছরে যা করেছে অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে এরা এটা ১৫-১৬ মাসে করবে বলে কারো কাছে কসম করেছে।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এরা কত অথর্ব তা বোঝা যায় এদের নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার মধ্যে। বেশি দিন না তো মাত্র তিন মাস আগে বাংলাদেশের সব ক্ষমতা নির্বাহী, আইন, বিচার, সংসদ, রাজনৈতিক সকল ক্ষমতা ব্যবহার করে ও আওয়ামীলীগ মত এত বড় একটা দল জামায়াত-শিবিরের মত এত ছোট একটা রাজনৈতিক দল কে নিষিদ্ধ করে ০৫ দিন টিকতে পারলো না আর এরা সারাদেশে সর্বোচ্চ ৪-৫ হাজার কিশোর গ্যাং এর পোলাপাইন নিয়ে নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা খুবই হাস্যকর। এ মহুর্তে এ সরকারের ডেডিকেটেড যত সমর্থক আছে ছাত্রলীগের এক ইউনিয়নে এর চাইতে বেশি নেতাকর্মী আছে !
আপনি হয়তো বলবেন আমি ছাত্রলীগের পক্ষে- জি না, গত ১৫ বছরের ছাত্রলীগের কার্যক্রমে – প্রশ্ন ই আসে না। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আমি সে প্রক্রিয়ায় বিরুদ্ধে। আপনার বা আমার যদি মনে হয় সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ গণহত্যাকারী তা হলে দেশের বা আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে সংগঠন হিসেবে গণহত্যার বিচার চাওয়া যেতো। আদালত নিষিদ্ধ করলে তো শেষ, আর আদালত যদি ঝুলিয়ে রাখতো তবে দেশে গনভোট করা যেতো এমন আরো অনেক রাস্তা ছিল। যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠন কে নিষিদ্ধ করার অর্থ ই হচ্ছে আপনি আসলে তাকে আগের চাইতে বেশি শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন। বিশ্বাস হয় না? উন্নয়নশীল বিশ্বের সব জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল নিয়ে পড়ে দেখুন। ঘটনা সবখানে একই!
আর লিখতে মন চাচ্ছে না- দুইটা কথা বলে শেষ করি, আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের গণগ্রেপ্তার করে মূলত এ অথর্ব লোকগুলো আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া সকল অন্যায় ও অন্যায্যতার বৈধতা দিয়ে দিলো। যেদিন দেখলাম সাবের হোসেন চৌধুরী, এম এ মান্নান, ফরহাদ হোসেন আর গত দুই দিন আগে মোকতাদির চৌধুরীর মত একজন জ্ঞানী, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সজ্জন মানুষ কে রিমান্ড দেওয়া হলো তখন ই বুঝলাম ভবিষ্যতে এদের দোহাই দিয়ে মূলত আওয়ামী লীগের কুখ্যাত সব হত্যাকারি এমপি-মন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে আনা সত্যিকারের সব অভিযোগকে রাজনৈতিক মামলা বলে দায়মুক্তি পেয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ না করুক- যদি কোনোভাবে বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে এদের অপ্রস্তুত রেখে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ডুকে পড়ে তবে ছাত্রজনতা – সমন্বয়ক এটা সেটা বিভিন্ন নামে যারা এখন সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে এদের লাশের টুকরা খুঁজে বের করতে জিবরাঈল আঃ এর সহযোগিতা লাগবে।
সাধারণ মানুষ হিসেবে একটাই চাওয়া, দেশটা ভালো থাকুক। সময় থাকতে সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।