‘ভাই, আমি মরি নাই, কেউ যদি আমার অজান্তে কাগজে-কলমে মাইরা ফালায়, তাহলে আমার কী বা করার আছে? আমারে যে মরা দেখাইয়া মামলা করছে আমার বৌ, তা আমি জানতাম না, যখন শুনলাম তখন ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি।’
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোরে সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার একটি কক্ষে বসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলায় নিহত দেখানো আল আমিন।
তিনি আরও বলেন, নিজের স্ত্রী যদি স্বামীকে মৃত বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তাহলে সেই স্বামী সবচেয়ে দুর্ভাগা।
পুলিশ জানায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আশুলিয়া থানায় যে হত্যাযজ্ঞ হয়, সেখানকার একজনের পরিচয় ছিল অজানা। সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে নিজের স্বামী আল আমিন দাবি করেন কুলসুম নামের এক নারী। ২৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও করেন ওই নারী। পরে সেটি ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়।
তবে পরবর্তীতে কুলসুমের আচরণে সন্দেহ হওয়ায় অনুসন্ধান নামে কয়েকটি গণমাধ্যম। বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কুলসুমের স্বামী সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায় অবস্থান করছেন এমন তথ্যের পর র্যাবের সহায়তা চাইলে আল আমিনের ভাইয়ের খোঁজ পায় র্যাব। তার সঙ্গে কথা বলে র্যাব নিশ্চিত হয় মামলায় মৃত দেখানো আল আমিন বেঁচে আছেন।
ভুক্তভোগী আল আমিনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার ভাই বেঁচে আছে। সে তিন দিন আগে আমাকে বলেছে মামলার বিষয়টি। আল আমিন থানায়ও গিয়েছিল, কিন্তু তারা কোনো সমাধানের পথ দেখাতে পারেনি। তাই ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে। যখন র্যাব বিষয়টি জানতে পারে তখনই ভাইকে দক্ষিণ সুরমা থানায় আসতে বলি।’
কথা বলতে বলতে বাবার সঙ্গে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন ভুক্তভোগী আল আমিন। সেখানেই একটি কক্ষে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি হেসে হেসে বলেন- ‘আমি মরিনি। আমি বেঁচে আছি।’ বাদী কুলসুমের ছবি দেখে নিশ্চিত করেন ছবির মানুষটি মামলার বাদী ও তার স্ত্রী। এরপর জানান একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আল আমিন বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে মোবাইল ফোনে কথার সূত্র ধরে ভালোবেসে বিয়ে করি কুলসুমকে। ঘরে একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কয়েক মাস ধরে পারিবারিক কলহ বেড়ে যাওয়ায় সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। দেশে গণ্ডগোলের পুরোটা সময় আমি ও আমার স্ত্রী মৌলভীবাজারের জুড়িতে অবস্থান করেছি। সেসময় আশুলিয়ায় একবারের জন্যও যাইনি। অথচ আমাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছে আমার স্ত্রী।’
জীবিত ছেলেকে মৃত দেখিয়ে মামলার ঘটনায় হতবাক আল আমিনের বাবা নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এমনটা হওয়ায় আমাদের পুরো পরিবার এখন আতঙ্কিত। ছেলের বৌ কুলসুম কেন এমনটি করেছে তা মাথায়ও আসছে না। বিষয়টি নিয়ে কুলসুম কোনো কথাও বলছে না।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানা থেকে আল আমিনকে উদ্ধারের বিষয়টি জানালে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিব সিলেটে গিয়েছেন। তাকে উদ্ধারের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।