সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে সরাইল থানায় আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। মামলার এজাহারে ৭২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
মামলার বাদী হয়েছেন সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শফি আলী। তবে তিনি অধিকাংশ আসামিকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ থেকে পরবর্তী কয়েক দিন আন্দোলন করেছিল হেফাজতে ইসলাম। ২৮ মার্চ দেশব্যাপী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও তৌহিদি জনতার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছিল। ওই দিন সরাইল বিশ্বরোড মোড় এলাকায় হরতালে অংশ নিয়েছিলেন মামলার বাদীর ছেলে হাফেজ আল-আমীন (১৭)। সেখানে ১ নম্বর আসামির (মোকতাদির চৌধুরী) নির্দেশে কয়েকজন আসামি আল আমীনকে প্রথমে মারধর করেন, পরে গুলি করে হত্যা করেন
মামলায় দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেনকে আর তৃতীয় আসামি করা হয়েছে সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লোকমান হোসেনকে। আসামির তালিকায় থাকা ৭২ জনের মধ্যে ৩৮ জন সরাইল উপজেলা বাসিন্দা। বাকি ৩৪ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সরাইল উপজেলার বাসিন্দাদের অধিকাংশই প্রত্যন্ত গ্রামের। তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী বা সমর্থক।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী মো. শফি আলী বলেন, ‘সব আসামিকে আমি চিনি না।’
২০২১ সালের ২৮ মার্চের ঘটনায় সরাইল থানায় গত ৩ সেপ্টেম্বর আরও একটি হত্যা মামলা হয়। ওই মামলায়ও প্রধান আসামি করা হয়েছে মোকতাদির চৌধুরীকে। ওই মামলায় ৬৭ জনের নাম উল্লেখ আছে। মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১০টি মামলা হলো, এর মধ্যে ৭টি হত্যা মামলা।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ৭২ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি আসামি হয়ে থাকলে তাঁকে অযথা হয়রানি করা হবে না।
গত ৩১ অক্টোবর রাতে রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ মোকতাদির চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে একের পর এক রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
গত ৫ নভেম্বর তাঁর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ডিগ্রি কলেজ ও চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের বাধা উপেক্ষা করে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে “মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করো, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করো। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার শিক্ষাঙ্গনের আলোকবর্তিকা, চব্বিশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে জোরালো কণ্ঠস্বর, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী-এর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।”-লেখা সম্বলিত ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সুলতানপুর-চিনাইর-আখাউড়া মহাসড়ক অবরোধ করে তারা।
তবে এ বিক্ষোভের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ডিগ্রি কলেজ এবং চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে তাণ্ডব চালায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, সেদিন পুলিশ দুইজন ছাত্রীসহ স্কুল ও কলেজের চার শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, পরীক্ষার হল থেকেই তাকে আটক করা হয়। এক দিন আটকে রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঐদিন চিনাইর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করে পুলিশের একাধিক কনস্টেবল।