ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। পরে ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। তা না হলে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব সহজ হবে না বলে মনে করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)।
বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে ‘আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বৈশ্বিক এই সংস্থা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাত প্রতিরোধে কাজ করে এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে পরামর্শ দিয়ে থাকে। মারাত্মক ধরনের সংঘাতে আগাম সতর্কতা দিয়ে থাকে আইসিজি। প্রতিবেদনে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নানা সংস্কার বাস্তবায়নে কিছু সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কার কর্মসূচির দিকে নজর দিতে চাইলে ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ বড় পরিসরে মাঠে না থাকায় বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। তবে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে। তারা বলেছে, তারা সংস্কারের জন্য ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের সময় দিতে চায়।
তবে বিএনপির অনেকেই নির্বাচনী প্রচার চালাতে আগ্রহী। কারণ, আগামী নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে। নিজেদের দাবি পূরণে বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। অতীতে দাবি পূরণে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এ কৌশল নিয়েছে।
বিএনপিকে ঠেকাতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই প্রধান সমর্থক—শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনী। জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের পর বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে শিক্ষার্থীদের উত্থান হয়। আবার শেখ হাসিনা হাতেগোনা যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি, তার একটি সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী গত ৪ আগস্ট হাসিনার দেওয়া কারফিউ কার্যকর না করার ফলে তার পরিণতি ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যা-ই হোক না কেন, তিনি ড. ইউনূসের পাশে থাকবেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ইসলামপন্থিদের, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের প্রভাব বেড়েছে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইসলামপন্থি পক্ষগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আন্দোলনে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে। ইতিমধ্যে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে ড. ইউনূসকে আপসও করতে দেখা গেছে।
হাসিনার ক্ষমতাকাল থেকে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো থেকে ইসলামপন্থী দলগুলোকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করাটা হিতে বিপরীত হতে পারে।
এক পর্যবেক্ষক বলেন, ইসলামপন্থী পক্ষগুলোকে মাঠের বাইরে ঠেলে দিয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তোলার চেয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করাটা জরুরি। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সদস্যও একমত।