পাওনা টাকা চাওয়ায় জুলাই গণহত্যার দুই মামলায় এক পাথর ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আমিনুল ইসলাম। মামলা দুটির একটি কদমতলী থানায় অপরটি উত্তরা পশ্চিম থানায় হয়েছে।
রোববার সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের মিডিয়া রুমের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম।
তিনি জানান, তার সাবেক দুই ব্যবসায়িক অংশীদার তার ১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার আসামি। তারাই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাজনৈতিক পরিচয় সাজিয়ে তাকে গণহত্যার মামলায় ফাঁসিয়েছেন। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের আইন উপদেষ্টার সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন এই ব্যবসায়ী। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মামলা দুটির একটি কদমতলী থানায় অপরটি উত্তরা পশ্চিম থানায় হয়েছে। মামলায় ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামকে যুবলীগ নেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর দুটি মামলাতেই এক নম্বর আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনার আসাদুল ইসলাম ও আমির হোসেন ষড়যন্ত্র করে আমাকে জুলাই গণহত্যা মামলার আসামি করেছেন। কারণ তারা আমার ১৪ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের মামলার আসামি। অর্থ আত্মসাতের মামলা থেকে বাঁচতে আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজের কোনোরকম সম্পর্ক না থাকলেও মামলার এজাহারে আমাকে যুবলীগের নেতা উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা। আমাকে যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলো এ ঘটনার তদন্ত চাই। মাননীয় আইন উপদেষ্টা তদন্ত করে মামলা দায়ের করার রহস্য উন্মোচন করবেন, এই দাবি জানাচ্ছি।’
গত ২৮ মার্চ জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ মামলায় আগাম জামিন নিতে আসা আসামিদের হামলার শিকার হন রাজধানীর বাড্ডার পাথর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। তিনি বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কাছে আবেদন করেন।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরে হামলা ও মারধরের ঘটনায় গত ৪ মার্চ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সিআর মামলা নং-৮৯/২৪ দায়ের করলে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডি বরাবর প্রেরণ করেন এবং ৩০ দিনের মধ্যে মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। সিআইডি তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে মামলার যাবতীয় কাগজপত্র প্রদান করি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এসপি আনিসুল ও এএসপি মো. সালাউদ্দিনসহ তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি মো. আসাদুল ইসলাম ও মো. আমির হোসাইনের কাছ থেকে অনৈতিক অর্থ নেন। মামলাটির কোনোরূপ তদন্ত করেননি। আমার প্রতিষ্ঠানের দুইজন কর্মকর্তার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি না নিয়ে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময়ক্ষেপণ করে গত ১৮ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তিনি বলেন, এমন কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার জন্য সব পুলিশ কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বলে মনে করি। এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করছি।
ব্যবসায়ীকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চকবাজার বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি মাত্র অবহিত হলাম। বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে জানাব।’
এ ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, বাদী আদালতে মামলা করেছেন। আমরা মামলাটি আদালতের আদেশে থানায় গ্রহণ করেছি। এমন বেশ কিছু মামলার অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। তবে হয়রানিমূলক এসব মামলায় আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করছি না। যারা সরাসরি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় অংশ নিয়েছে, ইন্ধন দিয়েছে তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করছি।