জুলাইতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গঠিত হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কোটা সংস্কার আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে সকল ছাত্র সংগঠনকে এতে সংযুক্ত করা হয়। বলা হয় জাতীয় ঐক্য রক্ষায় সবার সাথে কাজ করবে নতুন এই সংগঠনটি৷
কিন্তু গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্র সংগঠনগুলো। গতকাল (৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে শুধু সমন্বয়কদের সাক্ষাৎকারের পর ছাত্র নেতাদের ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে।
যার ফলে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ডাকা সভা বয়কট করেছে মূল ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো।
সভায় যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার প্রকল্প, শহীদদেরকে নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ছাত্রদের যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সবক্ষেত্রে দেখেছি কেবল একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকেই সব কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। অন্য কোনও সংগঠনের সঙ্গে কোনও প্রকার আলোচনাও করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের সাথে আলোচনার নামে কেবল কয়েকজন সমন্বয়কের সাথে আলোচনা করেছেন। এতে জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখন একটি পক্ষের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ছাত্রদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সব ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠন সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এই আন্দোলনে যুক্ত ছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর থেকেই আমরা অভ্যুত্থানের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য একটা সাংগঠনিক কাঠামো নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তারা ঐক্য টিকিয়ে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। তারপরেও জাতীয় স্বার্থে, জনগণের বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি।
এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, এমনকি গত সপ্তাহে আমরা সকল ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। ওই সময় উপস্থিত ছাত্র সংগঠনের বেশিরভাগই সেই দাবিতে একমত ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তারা অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেননি তারা। তাই আমরা মনে করেছি, সবার মাঝে ঐক্য টিকিয়ে রাখার মতো পরিপক্ব আচরণ তারা করেননি। তাই আমরা আজকের বৈঠকে অংশ নেই নি।
তিনি আরও বলেন, তবে আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার সকল অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ছাত্রদের সংহতি জোরালো করতে অভ্যুত্থানকারী সব শক্তিগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ এগিয়ে নিতে তৎপর থাকব।
প্রথম মিটিংয়েও অংশ নেয়নি বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। এই মোর্চায় রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
এই জোটে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে গঠিত একটি প্লাটফর্ম। এটি গঠনের সময় বলা হয়েছিল সব ছাত্র সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু আমরা দেখছি সব ছাত্র সংগঠনকে বাদ দিয়ে তারা এককভাবে অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর জাতীয় ঐক্য ভাঙার জন্য তারা দায়ী। তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে আজকের সভায় মূল ধারার প্রায় সব ছাত্র সংগঠন বয়কট করেছে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর একাধিক নেতা জানান, তারা বৃহস্পতিবার নাগাদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এক্ষেত্রে বিগত সরকার পতনের আন্দোলনে সংগঠনগুলোর ভূমিকা, সরকারের সঙ্গে যুক্ত আন্দোলনের শীর্ষনেতাদের বিষয়েও একটা অবস্থান নেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে, এমনটি দাবি একাধিক নেতার।
তবে এ প্রসঙ্গে কোনও ছাত্রনেতা বুধবার রাতে স্বপরিচয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।