দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল বিরোধীদল নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের অভিশংসন ভোট থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা পার্লামেন্টের শনিবার সন্ধ্যার অধিবেশন বয়কট করাতে বেঁচে যান তিনি।
গত সপ্তাহে সামরিক আইন জারির উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইউন, কিন্তু আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার মুখে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হন তিনি। ওই পদক্ষেপের কারণেই তার বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাবে ভোটের উদ্যোগ নেয় বিরোধীদল। কিন্তু প্রস্তাবের পক্ষে ২০০ ভোট দরকার হলেও পড়ে মাত্র ১৯৫ ভোট, এতে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। ভোটে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনপ্রণেতার অংশ না নেওয়াকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার উও ওন শিক।
তিনি বলেন, আজকে এখানে জাতীয় পরিষদে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে পুরো জাতি তা দেখছে, বিশ্বও দেখছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আবার চেষ্টা করার প্রত্যয় জানিয়েছে। আর ইউনের পার্টি বলেছে, এই সংকট সমাধানে তারা ‘আরও সুশৃঙ্খল, দায়িত্বশীল’ একটি পথ খুঁজে বের করবে।
মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে’ সমূলে উৎপাটনের কথা বলে হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন ইউন। তার এ ঘোষণায় পুরো দক্ষিণ কোরিয়া স্তম্ভিত হয়ে যায়।
কিন্তু পার্লামেন্ট তার জারি করা ডিক্রির বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনী ও পুলিশের বেষ্টনি উপেক্ষা করার পর আদেশ বাতিল করেন তিনি, তার মধ্যেই প্রায় ছয় ঘণ্টা পার হয়ে যায়। কিন্তু তার এই পদক্ষেপে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মিত্র দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে পড়ে, গণতান্ত্রিক সাফল্যের গাথা রচনাকারী দক্ষিণ কোরিয়ার অর্জিত সুনাম নষ্ট হওয়ার হুমকি তৈরি হয়।
রয়টার্স জানায়, প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার জন্য পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন দরকার ছিল। এটি নিশ্চিত করতে বিরোধীদের ইউনের দল রক্ষণশীল পিপলস পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) অন্তত আটজন সদস্যের সমর্থন দরকার ছিল। কিন্তু পিপিপির আইনপ্রণেতারা অন্য একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার পর অধিবেশন ছেড়ে চলে যায়, এ সময় পার্লামেন্টের কিছু সদস্য চিৎকার করে তাদের অভিসম্পাত করেন। ইউনের দলের মাত্র তিনজন ভোট দেন।
এর আগে শনিবার সকালেই জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রেসিডেন্ট, কিন্তু অভিশংসন ভোটের আগে পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।
অভিশংসন ভোট ব্যর্থ হওয়ার পর পিপিপির মুখপাত্র শিন ডং উক বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সরকারকে স্থগিত করে রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলিকে প্যারালাইসিস করার ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি করতে পারি না।”
তিনি উল্লেখ করেন, ইউন ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং তার ভবিষ্যৎ পার্টির ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন।