গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসেই দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। ফলে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্য সূচক ও লেনদেনের গতি।
শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তবে বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। ভালো মৌলভিত্তির অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম এখনও অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তথ্য পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করতে পারলে লোকসানের সম্ভাবনা কম এবং মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৭৬টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৩টির। আর ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় তিন গুণের বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৬৫২ কোটি টাকা বা দশমিক ১০ শতাংশ।
দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৯১ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৪ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৩০ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহের সূচকটি কমে ৪ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা দশমিক ২২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ২ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা দশমিক ১৫ শতাংশ।
ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও গত সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ২৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহের সূচকটি কমে ২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশ।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১২২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ২৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, দেশে এখনও রাজনৈতিক অস্থিরতা থামেনি। এক এক সময় এক এক ইস্যু সামনে আসছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী সাইড লাইনে চলে গেছেন। যে কারণে বাজারে লেনদেনের গতি কমেছে এবং বেশিরভাগ দিন দরপতন হচ্ছে। এই দরপতনের ফলে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
তিনি বলেন, টানা দরপতনের কারণে কিছু বিনিয়োগকারী বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। তবে এখন নতুন করে বাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিও কমে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে বিনিয়োগ করলে লোকসানের সম্ভাবনা কম। অবশ্য আগে যারা বিনিয়োগ করে বড় লোকসানে পড়েছেন, তাদের লোকসান পুরোপুরি কাভার করা কঠিন। তবে নতুন করে বিনিয়োগের মাধ্যমে সমন্বয় করে লোকসান কমিয়ে আনা সম্ভব।
এই লেনদেন খরার বাজারে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ড্রাগন সোয়েটারের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাভেলো আইসক্রিম, সায়হাম কটন, এনআরবি ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, জেনেক্স ইনফোসিস এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।