সুইডেনে স্কুলে গুলি, ১০ জন নিহত

ডেস্ক রিপোর্ট

সুইডেনের ওরেব্রো শহরে একটি স্কুলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে পাঁচজন আহত হয়েছে জানা গেলেও ক্রমেই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে একজন আততায়ী বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পরে ওরেব্রোতে একটি স্কুল ভবনে সন্দেহজনক গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পুলিশ জানতে পেরে ওরেব্রুর পশ্চিম হগা এলাকার স্কুল ক্যাম্পাসটি ঘিরে ফেলে এবং পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়, যা এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল।

সুইডিশ জাতীয় সন্ত্রাস দমনের জন্য এ স্পেশাল বাহিনীও রাজধানী স্টকহোম থেকে এসে যোগ দেয়।

বিকেল সাড়ে ৪টা দিকে পুলিশের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল যে, মোট পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্যে একজন মারা যায়, যে আততায়ী হিসেবে শনাক্ত হয়।

পুলিশ অফিসার রবার্তো ফরেস্ট তখন বলেন, বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ক্যাম্পাসের ভেতরে পাওয়া গেছে এবং আহতদের মধ্যে একজনকে আততায়ী হিসাবে সন্দেহ করা হচ্ছে যে পরে মারা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ঘটনাটিকে একটি চলমান গুরুতর সহিংস অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে সারা সুইডেন থেকে একাধিক পুলিশ ইউনিটসহ স্পেশাল ফোর্সকে ডেকে আনা হয় এবং সারা শহরে তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

পুলিশের মুখপাত্র লার্স হেডেলিন জনসাধারণকে নিরাপদ অবস্থানে সরে যেতে নির্দেশ দেন এবং অভিযান চলমান বলে জানান।।কিন্তু সন্ধ্যা গড়ানোর পর পরই পাওয়া যায় ভিন্ন চিত্র। একে একে লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তা সর্বশেষ দশজনে গিয়ে পৌঁছায়। তবে, পুলিশ কর্তৃক জানা যায়, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

এই খবরে শান্তিপ্রিয় দেশ সুইডেনে নেমে আসে শোকের ছায়া এবং রাজধানী স্টকহোমে সরকার এক জরুরি বৈঠকে বসে এবং সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনের কথা রয়েছে।

সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ’দুঃখ ও হতাশার সঙ্গে তিনি এবং রাজপরিবারের বাকি সদস্যরা ওরেব্রোতে হামলার তথ্য পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ রাতে নিহতদের পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাচ্ছি। এই সময়ে আমাদের ভাবনাগুলো আহত, নিহত এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি নিমিত্ত। এই অন্ধকার দিনে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং সুরক্ষার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করা পুলিশ, উদ্ধারকারী এবং চিকিৎসা কর্মীদের প্রতি আমি এবং আমার পরিবার আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই’।

ওরেব্রোতে সহিংসতার ঘটনাটি সুইডিশ রাজনীতিবিদদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ‘সুইডেনের জন্য আজ এক বেদনাদায়ক দিন। নিজের জীবনের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ থাকা এমন একটি দুঃস্বপ্ন, যা কাউকেই অনুভব করতে হবে না,’ বলে এক বিবৃতিতে বলেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসন। সুইডিশ সরকার পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে এবং ঘটনাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অভিযান এখনো চলছে এবং জনসাধারণের জন্য পুলিশের তথ্য অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টারসন আরো বলেন, ‘আমার আহবান হলো, কীভাবে এই অপরাধগুলো ঘটেছে তার তদন্ত করা।’ বিরোধী জোটের নেত্রী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, তাদের আত্মীয়স্বজন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে জনসাধারণ এখন পুলিশ এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলী অনুসরণ করে।’

সন্ধ্যায় বেশ কিছু পুলিশ ওরেব্রো শহরের একটি ঠিকানায় অভিযান চালায়। স্থানীয় সংবাদপত্রের মতে জানা যায় যে, অভিযানের সময় স্নাইপাররা কাছের একটি বিপরিতমুখি দালানের ছাদে অবস্থান করছিল। অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের চারপাশের কর্ডন করে রাখা হয়েছিল এবং প্রায় ১০ জন সাদা পোশাকের পুলিশ অফিসার এলাকাটি পাহারায় নিয়োজিত ছিল। ভবনটির পাশ দিয়ে যাওয়া একজন পথচারী মিডিয়াকে জানায় যে, তিনি কয়েক শ মিটার দূরে একটি বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন। সশস্ত্র পুলিশ যখন মই দিয়ে একটি ভবনের ভেতর প্রবেশের চেষ্টা করছিল, তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় দৈনিক নেরিকেস আলেহান্ডার সাংবাদিকরাও একটি বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে জানায়। তবে বাড়িটির বাইরে থেকে কোনো ধরনের দৃশ্যমান বস্তুগত ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়নি। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল।

শেয়ার করুন